কোরবানির ঈদের পেছনে রয়েছে এক অসাধারণ ইতিহাস—যা ত্যাগ, আনুগত্য এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসের প্রতীক। এই ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন হযরত ইব্রাহিম (আঃ)। তাঁর জীবনের এক মহা পরীক্ষার ফলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কোরবানির এই মহান রেওয়াজ।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে ছিলেন?
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ছিলেন একজন মহান নবী যাঁকে “খলিলুল্লাহ” বা আল্লাহর বন্ধু বলা হয়। তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদের প্রবক্তা এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনে ছিলেন অটল ও নির্ভীক। তাঁর জীবন আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ত্যাগের অসামান্য দৃষ্টান্ত।
ইব্রাহিম (আঃ) এর কোরবানির ঘটনার পটভূমি
আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-কে একটি কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন। এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেন, তিনি তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে কোরবানি করছেন। তিনি জানতেন, নবীদের স্বপ্ন এক ধরনের ওহী। অতএব, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আদেশ।
ইসমাইল (আঃ) এর আনুগত্য ও হৃদয়বিদারক মুহূর্ত
ইব্রাহিম (আঃ) যখন তাঁর ছেলেকে বললেন যে তিনি স্বপ্নে তাঁকে কোরবানি করতে দেখেছেন, ইসমাইল (আঃ) বিনা দ্বিধায় বললেন:
“হে পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তা পালন করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।”
(সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১০২)
এই কথা প্রমাণ করে যে ইসমাইল (আঃ) ছোট বয়সেই আল্লাহর নির্দেশের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
আল্লাহর পক্ষ থেকে কোরবানির বিকল্প প্রদান
যখন ইব্রাহিম (আঃ) সত্যিই তাঁর পুত্রকে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন এবং ছুরি চালাতে উদ্যত হলেন, তখন আল্লাহ পাক ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেন যে, ইসমাইল (আঃ)-এর স্থানে একটি দুম্বা কোরবানি করা হবে। এটিই ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষার সফলতা এবং কোরবানির প্রবর্তন।
ইসলামে কোরবানির তাৎপর্য
এই ঘটনার স্মরণে মুসলমানরা প্রতিবছর ঈদুল আজহা উদযাপন করে এবং পশু কোরবানি করে থাকেন। মূল বার্তা হলো—আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কোনো কিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকা।
শেষ কথা: কোরবানি মানে শুধু পশু জবাই নয়
আসল কোরবানি হলো নিজের ইচ্ছা, লোভ, অহংকার এবং খারাপ গুণাবলিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আমাদের সেই মহান আত্মত্যাগের আদর্শ শিক্ষা দেন।