প্রস্রাব খানায় প্রবেশের দোয়া, নিয়ম, সুন্নাত ও ওয়াজিব
ইসলামে প্রতিটি কাজের আগে দোয়া পড়া, সুন্নাত ও নিয়ম পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্রাব খানায় প্রবেশ করার সময়ও কিছু বিশেষ দোয়া এবং সুন্নাত রয়েছে, যা ইসলামী জীবনের শুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রস্রাব খানায় প্রবেশের জন্য কিছু বিশেষ দোয়া এবং আচরণ বিধি প্রস্তাব করেছেন, যা মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করা উচিত।
প্রস্রাব খানায় প্রবেশের দোয়া
প্রস্রাব খানায় প্রবেশ করার আগে একটি বিশেষ দোয়া পড়া সুন্নাত, যা শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাহায্য করে। এই দোয়াটি হলো:
بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
Bismillahi Allahumma inni a'udhu bika min al-khubthi wal-khaba'ith.
অর্থ: "আল্লাহর নামে, আল্লাহ্, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অপবিত্র ও অশুভ শক্তি থেকে।"
এই দোয়া প্রস্রাব খানায় প্রবেশের আগে পড়লে শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং সেখানে প্রবেশ করার সময় সৌম্যতা বজায় থাকে।
প্রস্রাব খানায় প্রবেশের সুন্নাত ও নিয়ম
রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রস্রাব খানায় প্রবেশের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত ও নিয়ম পালন করেছেন, যেগুলি অনুসরণ করা উচিত:
1. ডান পা দিয়ে প্রবেশ না করা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) সুন্নাত অনুসারে, প্রস্রাব খানায় প্রবেশ করার সময় প্রথমে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা নিষেধ। বরং, বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা উচিত। একইভাবে, বাহিরে বের হওয়ার সময় প্রথমে ডান পা দিয়ে বের হওয়া সুন্নাত।
2. পানির ব্যবহার:
যতটুকু সম্ভব, পরিষ্কার পানি ব্যবহার করে শৌচাচ্ছেদ করা উচিত। এতে শরীরের শুদ্ধতা ও পবিত্রতা বজায় থাকে।
3. সামাজিকতা ও গোপনীয়তা:
প্রস্রাব খানায় প্রবেশ করার সময় নিজেকে গোপন রাখার চেষ্টা করুন এবং অন্যদের সম্মান বজায় রাখুন। কোনো অবস্থাতেই অপ্রয়োজনীয় শব্দ করা বা অস্বস্তিকর আচরণ করা উচিত নয়।
4. ব্যক্তিগত পরিস্কারতা বজায় রাখা:
প্রস্রাব খানায় প্রবেশের পর যতটুকু সম্ভব, নিজের শরীর ও পোশাক পরিস্কার রাখতে হবে। শরীর বা কাপড়ে কোনো অবাঞ্ছিত রস বা দূষণ লেগে গেলে তা দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে।
5. দ্বিধাবিভক্ত না হওয়া:
প্রস্রাব বা পায়খানা যাওয়ার সময় ধৈর্য ধরে কাজ সম্পন্ন করতে হবে, তাড়াহুড়ো বা অস্থিরতা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রস্রাব খানায় প্রবেশের সময় ওয়াজিব
ইসলামে কিছু কাজ ওয়াজিব বা অপরিহার্য। প্রস্রাব খানায় প্রবেশের সময় কিছু ওয়াজিব আচরণ পালন করা উচিত:
1. পায়খানা বা প্রস্রাবের সময় দোয়া না পড়া:
যদিও প্রস্রাব খানায় প্রবেশের সময় "বিসমিল্লাহ" বলা সুন্নাত, তবে যদি কেউ ভুলে যান বা কিছুটা পরিমাণে কাজ করতে থাকেন, তাতে গুনাহ হবে না। তবে, সময়মতো এই দোয়া পাঠ করা গুরুত্বপূর্ণ।
2. শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া:
প্রস্রাব খানায় প্রবেশের আগে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শয়তান বা অপবিত্র শক্তি না আসতে পারে এবং কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
3. অবহেলা বা অপচয় থেকে বিরত থাকা:
প্রস্রাব বা পায়খানা করার সময় শরীরের সংস্থান বা পানি অপচয় করা ওয়াজিব নয়। সব কিছু পরিমিতভাবে ব্যবহার করা উচিত।
প্রস্রাব খানায় প্রবেশের পর করণীয়
প্রস্রাব খানায় প্রবেশের পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুসরণ করা উচিত:
1. ধীরেসুস্থে কাজ করা:
প্রস্রাব বা পায়খানা করার সময় অস্থিরতা ও তাড়াহুড়ো থেকে বিরত থাকতে হবে। এজন্য ধৈর্য ধরুন এবং শরীরের প্রয়োজনীয়তার পরিপূরকভাবে কাজ করুন।
2. শুদ্ধতা বজায় রাখা:
কাজ শেষ হওয়ার পর, শরীর ও কাপড়ের শুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। পানি দিয়ে পরিষ্কার করা এবং পোশাক পরিস্কার রাখা ওয়াজিব।
উপসংহার
প্রস্রাব খানায় প্রবেশের সময় দোয়া, সুন্নাত এবং ওয়াজিবের প্রতি মনোযোগী হওয়া ইসলামিক জীবনাচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের উচিত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাত অনুসরণ করে নিজের শুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করা। এই অভ্যাস শুধুমাত্র শারীরিক ও মানসিক পরিশুদ্ধতা দেয়, বরং আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ভক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে দাঁড়ায়।