মুলতানি মাটি কি:
মুলতানি মাটি ইংরেজিতে বলা হয় ফুলার আর্থ, এটি এক বিশেষ ধরনের মাটি যা অনেক খনিজ উপাদান দ্বারা গঠিত। এটি একটি ধাতু যার মধ্যে ভরপুর মাত্রায় রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।
এটি পৃথিবীর সব জায়গায় পাওয়া হয় না। অল্প কিছু জায়গায় এই মাটি পাওয়া যায়। ১৮০০ শতাব্দীতে পাকিস্তানের মুলতান শহরে এই ধাতু প্রথম পাওয়া যায়, তাই সেই শহরের নাম অনুসারে এই মাটির নাম রাখা হয়েছে মুলতানি মাটি। তারা লক্ষ্য করেছিলো মুলতানি মাটিতে আছে দারুন পরিষ্কার করার ক্ষমতা। সেই তখন থেকেই ত্বক উজ্জ্বল করতে ব্যবহার হয়ে আসছে এই মাটি।
মুলতানি মাটির উপকারিতাঃ
মুলতানি মাটির রয়েছে নানা উপকারিতা। এটি মুখে, শরীরের ত্বক, হাত পা এমনকি চুলের যত্নে ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
১. শরীরের ত্বক বা মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করতে এর জুড়ি নেই।
২. এটি প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবেও কাজ করে।
৩. এটি ভিতর থেকে ময়লা পরিষ্কার করে ত্বক কে নমনীয় ও মসৃণ করে গড়ে তোলে।
৪. শরীরের কোথাও ঘন কালো দাগ থাকলে নিয়মিত এই মাটির ব্যবহার এ তা দূর হয়।
৫. ত্বকে ব্রণের প্রভাব কমায়।
৬. ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থাকলে তা দূর করতে সাহায্য করে।
৭. অতিরিক্ত তৈল ভাব দূর করে।
৮. ট্যানিং দূর করে।
৯. একই কাজ মুলতানি মাটি চুলের জন্য ও করে থাকে। মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তৈল ভাব দূর করে এটি।
১০. চুল মসৃণ ও সিল্কি করতে সাহায্য করে।
১১. মাথার ত্বকে কোনো ইনফেকশন বা ফুসকুড়ি থাকলে তা দূর করে।
১২. চুলে সাইন বা উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে।
মাত্র ১মাসে ত্বক ফর্সা করতে মুলতানি মাটির ফেসপ্যাকঃ
মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক (face pack):
ফুল্লারস আর্থ বা মুলতানি মাটির বহুকাল ধরেই রূপচর্চায় ব্যবহার আছে। এতে থাকে ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, যা স্কিনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান তো করেই, তার সাথে স্কিনকে সুন্দর করে তুলতেও এর জুড়ি মেলা ভার। স্কিনের যে কোনো সমস্যা সারিয়ে তুলতে উপযোগী। এটি স্কিনকে খুব সুন্দর ভাবে ভেতর থেকে clean করে। স্কিনের অতিরিক্ত তেল ময়লা টেনে বার করে এবং একটা হেলদি স্কিন দেয়। আর ত্বককে ফর্সা করার ক্ষেত্রে এর মত উপকারি উপাদান খুব কমই আছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, ত্বককে ফর্সা করতে কিভাবে কাজে লাগাবেন মুলতানি মাটিকে।
গরজিয়াস স্কিন পেতেঃ
গরজিয়াস স্কিন পেতে একসঙ্গে ব্যবহার করুণ মুলতানি মাটি, চন্দন, ও টম্যাটো। কিভাবে করবেন? দেখে নিন।
উপকরণঃ ২চামচ মুলতানি মাটি, ১চামচ চন্দন ও ১চামচ টম্যাটোর রস বা একটা ছোট টম্যাটো
পদ্ধতিঃ মুলতানি মাটি, চন্দন ও টম্যাটোর juice বা ছোট টম্যাটো ব্লেণ্ড করেও ব্যবহার করতে পারেন। সবকটি উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। চাইলে এর সঙ্গে এক চিমটে হলুদ গুড়ো মিশিয়ে নিতে পারেন। এবার এই ঘন পেস্টটা মুখে, গলায় ভালো করে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে হালকা গরমজলে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন করলেই চোখে পড়বে স্কিনের গ্লো।
স্কিনকে ভেতর থেকে রেডিয়েন্ট করে তুলতেঃ
আমরা জানি পাকা পেঁপে ও মধু দুটোই স্কিনকে fair করতে বেশ উপকারি। আর এর সাথে মুলতানি মাটি যোগ হলে তো কোন কথাই নেই। রেডিয়েন্ট স্কিন পাওয়া হাতের মুঠোয়।
উপকরণঃ হাফ কাপ পেঁপের টুকরো, ১চামচ মুলতানি মাটি ও ১চামচ মধু।
পদ্ধতিঃ পাকা পেঁপে আগে ব্লেণ্ড করে নিন। এরপর এর সাথে মুলতানি মাটি ও মধু(honey) মেশান। ভালো করে মিশিয়ে ঘন পেস্টটা মুখ, গল্ ঘাড়ে লাগান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর হালকা গরমজলে ধুয়ে নিন। এটা ডার্ক প্যাচেস দূর করে স্কিনকে গ্লোয়িং করে তোলে।
ইনস্ট্যান্ট গ্লো পেতেঃ
ইনস্ট্যান্ট গ্লো পেতে ব্যবহার করুন মুলতানি মাটি ও তার সঙ্গে একটু আঙুর। আঙুর স্কিনকে ডিটক্সিফাই করে, যার ফলে পাওয়া যায় পার্লারের মত নিখুঁত ফেসিয়াল গ্লো(facial glow)। আর এতে আছে অ্যান্টি-এজিং গুনাগুণ যা স্কিনকে রাখে টানটান, স্মুথ আর স্কিন কুঁচকে যাবার হাত থেকে রক্ষা করে। আর মধু স্কিনকে ময়েশচারাইজড রাখে।
উপকরণঃ ১ চামচ মুলতানি মাটি, ১চামচ মধু ও কয়েকটা আঙুর।
পদ্ধতিঃ প্রথমে আঙুর ব্লেণ্ড করে নিন। এরপর এর সাথে মুলতানি মাটি ও মধু মেশান। ভালো করে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুদিন করুন আর পান হেলদি গ্লোয়িং স্কিন(glowing skin)। এটা অনেকটা ডিটক্সিফাইং ফেসিয়ালের মত কাজ করে।
তাহলে ত্বককে ফর্সা করতে আর বাইরের ক্যামিকাল যুক্ত প্রোডাক্ট নয়, ব্যবহার করুন মুলতানি মাটির এই প্যাকগুলো। সপ্তাহে দু’দিন করে এক একটা প্যাক লাগান। কথা দিচ্ছি এক মাসের মধ্যেই গ্লোয়িং হেলদি স্কিন আপনার হাতের মুঠোয়।
মুলতানি মাটির অপকারিতাঃ
মুলতানি মাটির বিশেষ কোনো অপকারিতা না থাকলেও এটি ব্যবহার এর সঠিক নিয়ম না জানার কারণে মানুষ ত্বকের নানা ক্ষতি সাধন করে ফেলেন। প্রতিটি ত্বক যেমন ভিন্ন তাই এর ব্যবহার বিধি ও প্রতিটি ত্বকের জন্যই ভিন্ন। যাদের অত্যন্ত শুষ্ক ত্বক তারা প্রতিদিন মুলতানি মাটি ব্যবহার করলে তা ত্বককে আরো শুষ্ক করে দিবে এবং ব্রণ এর উপদ্রব ও বাড়াতে পারে। তাই সপ্তাহে দুই দিন এই মাটি ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
প্রতিটি প্রাকৃতিক উপাদানই কিছু না কিছু গুনাগুন দিয়ে ভরপুর হয়ে আছে। এর সঠিক এবং নিয়মিত ব্যবহার আপনার জন্য বয়ে নিয়ে আসতে পারে নানান উপকারিতা।
মুলতানি মাটির দাম কত?
মুলতানি মাটির এক প্যাকেটের দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৯০ টাকা, ৩০০ টাকা, ৫০০ টাকা ৬০০ টাকা হতে পারে। তবে আপনি যেখানেই মুলতানি মাটি কেনেন যাচাই বাচাই করে কিনবেন কারন এখনকার সময় আসল জিনিস পাওয়া খুবিই কষ্ট সাধ্যবিষয়। তবে স্থান ও দোকান ভেদে এর দাম পরিবর্তন হতে পারে।
মুলতানি মাটি কি প্রতিদিন ব্যবহার করা যাবে?
প্রতিদিন গোসলের আগে এটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি হাত পায়ের ত্বক উজ্জ্বল এবং নরম করে। – রুক্ষ এবং প্রাণহীন চুলের জন্য ৪ চা চামচ মুলতানি মাটি, আধা কাপ টক দই, অর্ধেক লেবুর রস এবং ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে সারা চুলে ভালো মত লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে চুল শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মুলতানি মাটি কোথায় পাওয়া যাবে?
পাকিস্তানের মুলতান প্রদেশে এই মাটি পাওয়া যায়। মূলত সৌন্দর্য চর্চার জন্য এই মাটি ব্যবহার করা হয়। ত্বকএর উজ্জ্বলতা ও ফর্সা করার জন্য মুলতানি মাটি ব্যবহার করা হয়। মূলত বিউটি পার্লার, কসমেটিক স্টোর ও মুদিখানার দোকানে এই মাটি পাওয়া যায়। তাছাড়াও মৌচাক মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় কসমেটিক্স এর দোকানগুলোতে কিনতে পারবেন মুলতানি মাটি।
মুলতানি মাটি চেনার উপায়?
আসল মুলতানি মাটির নিজস্ব কোন ঘ্রাণ না থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে প্যাকেজিংয়ের সময় কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধিযুক্ত ঘ্রাণ মুলতানি মাটির সাথে যুক্ত করে। ভালোভাবে প্যাকেজিং করা আসল মুলতানি মাটির ঘ্রাণ নকল মুলতানি মাটির ঘ্রানের চেয়ে উৎকৃষ্ট হবে।
অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় লাভ করার জন্য নকল মুলতানি মাটি বিক্রি করে থাকেন। যেগুলো অনেক ক্যামিকেল দিয়ে বানানো হয় এবং না বুঝে কিনে ব্যবহার করার ফলে আমরা ধরে নেই যে মুলতানি মাটি আমাদের ত্বকে স্যুট করছেনা বা এটি আপনার ত্বকে আরো খারাপ রিয়েক্ট করছে। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে আসল মুলতানি মাটি চিনে কিনা টা কতটা জরুরি।
মুলতানি মাটি দুই প্রকারেই পাওয়া যায় বাজারে। আস্তো মাটি এবং মাটির গুড়ো হিসেবে।
মুলতানি মাটি অনেক নরম, ছোট ছোট দানাদার একটি মাটি। এটি হাতে নিলে কিছুটা গুড়ো হাতের সাথে লেগে যায় যা ঝেড়ে ফেলে দিলে উড়ে যায় ঠিকই কিন্তু এর হালকা হোয়াইট কাস্ট হাতে লেগে থাকে। এবং এর কিছুটা আঠালো ভাব ও হাতে লেগে থাকে। এর সুন্দর কিছুটা মৃদু একটি গন্ধ আছে এবং এটি যথেষ্ট ভারী। কিন্তু যেসব মুলতানি মাটি মানুষ বানিয়ে থাকেন সেসব হাতে নেয়ার সাথে সাথে গুড়ো গুড়ো আকারে পড়তে থাকে এবং উৎকট ক্যামিকেল এর গন্ধ আসে।
মুলতানি মাটি নিয়ে প্রকৃতির কথাঃ
প্রাকৃতিক উপায়ে যে কোন সুরক্ষা মানবজাতির জন্য হতে পারে মঙ্গলজনক। প্রাকৃতিক সুরক্ষার কোন ক্ষতিকর দিক না থাকায় আপনি সহজেই গ্রহণ করতে পারেন। প্রাকৃতিক সুরক্ষা গুলো একটু ধীরে ধীরে কাজ করলেও অত্যন্ত ফলদায়ক হয়ে থাকে।