অযুর আগে ও পরের দোয়া
অযু (Wudu) ইসলামিক ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা মুসলমানদের দৈনন্দিন ইবাদত যেমন নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি করার আগে করতে হয়। এটি একজন মুসলিমকে শারীরিক ও মানসিক পবিত্রতায় প্রস্তুত করে, যাতে তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে উপস্থিত হতে পারেন। অযু করার সময় ও পরেও কিছু বিশেষ দোয়া রয়েছে, যা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব দোয়া পড়ে, একজন মুসলিম আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য ও বরকত আশা করে।
১. অযুর আগে দোয়া
অযু শুরু করার আগে একটি ছোট দোয়া পড়া সুন্নত। এই দোয়াটি পাঠ করার মাধ্যমে মুসলিম আল্লাহর সাহায্য চেয়ে অযু শুরু করেন। এটি অযুর সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথা যা হাদিসেও উল্লেখিত।
দোয়া:
بِسْمِ اللَّهِ
Bismillah (অর্থ: "আল্লাহর নামে")।
এটি অযু করার সময় প্রথমে বলে শুরু করতে হবে। "বিসমিল্লাহ" বলতে মুসলিম আল্লাহর সাহায্য ও পবিত্রতার জন্য তাঁর নাম নেন, এবং একে আত্মবিশ্বাস ও মনোবল অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি অযু করার পূর্বে "বিসমিল্লাহ" বলবে, তার অযু পূর্ণ পবিত্রতা লাভ করে।
২. অযুর পরের দোয়া
অযু শেষ হওয়ার পরেও একটি বিশেষ দোয়া রয়েছে, যা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে একজন মুসলিম তার পবিত্রতা পূর্ণ করার পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে তার সাহায্য ও ক্ষমা চায়।
দোয়া:
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
Ashhadu alla ilaha illallah wahdahu la sharika lahu wa ashhadu anna Muhammadan abduhoo wa rasooluhu
(অর্থ: "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর সাথে কোনো অংশীদার নেই, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রসূল।")
এই দোয়া অযু শেষ করার পর পড়া উচিত। এটি ব্যক্তির জন্য অনেক বড় ফজিলত এনে দেয়। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি অযু শেষ করার পর এই দোয়া পড়বে, তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং সে নবজাতকের মতো পবিত্র হয়ে যায়। এই দোয়া আল্লাহর একত্ব ও মুহাম্মদ (সা.) এর রিসালাতের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসের প্রতীক।
৩. অযুর গুরুত্ব ও শর্ত
অযু শুধু একটি শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের প্রক্রিয়া নয়, এটি মুসলিমের আত্মিক পবিত্রতা অর্জনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও। অযু করার আগে ও পরে দোয়া পাঠ করা মুসলিমদের আত্মবিশ্বাস ও মনোভাব আরও শক্তিশালী করে এবং ইবাদতের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করে। অযু করার কিছু শর্ত রয়েছে, যেগুলো পূর্ণ করতে হয়:
নিয়ত: অযু শুরু করার পূর্বে সঠিক নিয়ত করা প্রয়োজন।
শারীরিক পবিত্রতা: অযুর পূর্বে যদি কোনো শারীরিক অশুদ্ধতা থাকে (যেমন: গ্যাস বা জরুরি প্রয়োজনের কারণে শৌচাগারে যাওয়া), তা পরিষ্কার করতে হবে।
পানি ব্যবহার: অযু করার সময় প্রয়োজনীয় জায়গাগুলো পরিষ্কার করা, যেমন হাত, মুখ, নাক, পা ইত্যাদি, যথাযথভাবে পানি দিয়ে।
উপসংহার
অযু ইসলামিক জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা একজন মুসলিমের শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতা অর্জনে সাহায্য করে। অযুর আগে "বিসমিল্লাহ" বলা এবং পরে "আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" দোয়া বলা মুসলিমদের জন্য সুন্নত এবং ফজিলতপূর্ণ। এই দোয়াগুলি শুধু একজন মুসলিমের পবিত্রতাকে নিশ্চিত করে না, বরং তার ইবাদত ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করে। অযুর সময় ও পরের দোয়া মুসলিমদের জন্য এক অপূর্ব আধ্যাত্মিক দিক, যা তাদের ঈমান ও তাওহীদকে আরও দৃঢ় করে।