ইস্তেখারার নিয়ম ও দোয়া
অর্থ: "ইস্তেখারা" হলো এমন একটি বিশেষ দোয়া যা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আল্লাহর কাছে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রার্থনা করার জন্য পড়া হয়। এটি একটি সুন্নত আমল, এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলিমদের ইস্তেখারা পড়ার তাগিদ দিয়েছেন।
ইস্তেখারা শব্দটি আরবি থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে "সর্বোত্তম জ্ঞান চাওয়া"। কোনো বিশেষ কাজে লেগে যাওয়া উচিত কি না, বা কোনো সিদ্ধান্ত সঠিক কি না, সে সম্পর্কে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার জন্য এই দোয়া করা হয়।
ইস্তেখারা নামাজের নিয়মাবলী
ইস্তেখারা পড়ার জন্য বিশেষ কোনো সময় বা দিন নেই। তবে রাতে ঘুমানোর আগে পড়া উত্তম, যাতে আল্লাহ থেকে কোনো সঙ্কেত বা ইঙ্গিত লাভ করা যায়। ইস্তেখারা নামাজের নিয়মাবলী হলো:
১. দুই রাকাত নামাজ আদায় করুন: ইস্তেখারার জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা ইখলাস পড়া ভালো।
২. নামাজ শেষে ইস্তেখারার দোয়া পড়ুন: নামাজের পর নিম্নলিখিত ইস্তেখারার দোয়াটি পাঠ করুন।
ইস্তেখারার দোয়া
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ، اَللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসতাখিরুকা বি-ইলমিকা ওয়া আসতাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা ওয়া আসআলুকা মিন ফাদলিকাল-আজিমি। ফা-ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আ’কদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু, ওয়ানতা আল্লামুল-গইউব। আল্লাহুম্মা, ইন্কুন্তা তা’লামু আন্না হাজাল-আমরা খায়রুল্লি ফি দ্বিনি ওয়া মা’আশি ওয়া আকিবাতি আমরি ফাকদিরহু লি ওয়া ইয়াসসিরহু লি সুম্মা বারিকলি ফিহি। ওয়া ইন্কুন্তা তা’লামু আন্না হাজাল-আমরা শার্রুল্লি ফি দ্বিনি ওয়া মা’আশি ওয়া আকিবাতি আমরি ফাসরিফহু আন্নি ওয়াসরিফনি আন্হু ওয়াকদিরলি আল-খাইরা হাইথু কান সুম্মা আরদিনি।
অর্থ: "হে আল্লাহ, আমি আপনার অসীম জ্ঞানের দ্বারা আপনার কাছে সাহায্য চাই এবং আপনার শক্তির দ্বারা আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি, এবং আপনার মহান দয়া চাই। আপনি সবকিছু জানেন, আমি জানি না; আপনি সবকিছুর উপর ক্ষমতা রাখেন, আমি রাখি না। আপনি অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখেন। হে আল্লাহ, আপনি জানলে যে এই কাজটি আমার জন্য, আমার ধর্মের জন্য, এবং আমার জীবনের শেষের জন্য কল্যাণকর, তবে সেটি আমার জন্য নির্ধারণ করুন, এবং এটি আমার জন্য সহজ করে দিন এবং এতে বরকত দান করুন। আর যদি আপনি জানেন যে এই কাজটি আমার জন্য, আমার ধর্মের জন্য, এবং আমার জীবনের শেষের জন্য ক্ষতিকর, তবে এটিকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিন এবং আমাকে অন্যদিকে সরিয়ে দিন এবং আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করুন এবং তাতে আমাকে সন্তুষ্ট করুন।"
ইস্তেখারার ফজিলত
ইস্তেখারা মানুষের জীবনে অনেক বরকত ও সঠিক দিকনির্দেশনা নিয়ে আসে। কিছু উল্লেখযোগ্য ফজিলত হলো:
সঠিক দিকনির্দেশনা পাওয়া: ইস্তেখারার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দেন এবং সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আস্থা ও স্থিরতা প্রদান করেন।
আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: ইস্তেখারা পড়ার ফলে আমাদের সিদ্ধান্তে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং সিদ্ধান্তে মনোশান্তি আসে।
আল্লাহর রহমত লাভ: ইস্তেখারা আমাদের আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের একটি মাধ্যম, যা আমাদের জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত আনার একটি পথ।
ইস্তেখারার মাধ্যমে সঙ্কেত পাওয়া
ইস্তেখারা পড়ার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে যে কোনো সঙ্কেত বা ইঙ্গিত স্বপ্নে অথবা বাস্তব পরিস্থিতিতে আসতে পারে। এটি কোনো বিশেষ আকারে হতে পারে না; বরং মনে শান্তি আসা বা বিশেষ আকর্ষণ অনুভব করাও সঙ্কেত হিসেবে ধরা যেতে পারে। তবে ইস্তেখারা পড়ার পরে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে এবং তাঁর পরিকল্পনার প্রতি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।