মাশরুমের উপকারিতা

মাশরুমের উপকারিতা

মাশরুমের উপকারিতা


মাশরুমের পুষ্টিগুণঃ


আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাই মাশরুমের পুষ্টিগুণ সেগুলোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এটি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ সহ শরীরকে সুস্থ রাখতে খুবই সহায়ক। মাশরুমে মানবদেহে্র জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি এমাইনো এসিডের মধ্যে প্রত্যেকটিই বিদ্যমান। প্রোটিনে ভরপুর মাশরুমে কোন প্রকার ক্ষতিকর চর্বি না থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে মেদভূড়ি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতি একশ গ্রাম মাশরুমে প্রোটিন ২৫-৩৫ গ্রাম, ভিটামিন ৫৭-৬০ গ্রাম ও ৫-৬ গ্রাম মিনারেল, শর্করা, উপকারী চর্বি ৪-৬ গ্রাম পাওয়া যায়। এতে আঁশের পরিমাণও খুবই সন্তোষজনক ও এর পরিমাণ প্রায় ১০-২৮%। এই পরিমাণটি অন্যান্য খাবারের তুলনায় অনেক বেশী। শুকনো মাশরুমে ৫৭-৬০% ভিটামিন ও মিনারেল থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকায় মাশরুম দেহকে সুরক্ষিত রাখতেও বিশেষ ভুমিকা রাখে।


মাশরুম খাওয়ার নিয়মঃ


মাশরুম যে কেবল খেতেই সুস্বাদু তাই নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাশরুম রাখা উচিত। তবে আবর্জনায় উৎপন্ন মাশরুম না খেয়ে শুধু চাষ করা মাশরুম খেতে হবে। এটি ভেজে, সুপ করে বা রান্না করে কিংবা সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়। কাঁচা বা শুকনা মাশরুম ১৫ থেকে ২০ মিনিট ফুটানো গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে উক্ত পানি ফেলে দিতে হয়। মাশরুম ফ্রাই করে বা সবজির মতো রান্না করেও খাওয়া যায়। এছাড়া তরকারি বা মাছ-মাংশের মধ্যে দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়।


মাশরুমের উপকারিতাঃ


১. গর্ভবতী মা ও শিশুদের রোগ প্রতিরোধেঃ


 মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের এমন সমন্বয় আছে যা শরীরের ইমিউন সিষ্টেমকে উন্নত করে। নিয়োসিন ও অ্যাসকরবিক এসিড বা ভিটামিন সি’র প্রাচুর্য থাকায় মাশরুম স্কার্ভি, পেলেগ্রা প্রভৃতি শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধে উপকারী।


২. বহুমুত্র প্রতিরোধেঃ


 বহুমুত্র বা ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের শর্করা ও ফ্যাট জাতীয় খাবার ক্ষতিকারক। ফ্যাট ও শর্করা কম এবং আঁশ বেশি থাকায় বহুমুত্র বা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মাশরুম বিশেষ উপকারী ও ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাবার। নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমিয়ে আনা সম্ভব।


৩. চর্মরোগ প্রতিরোধে মাশরুমঃ


 নানা ধরনের চর্মরোগ নিরাময়ে মাশরুম বিশেষভাবে উপকারী। ঝিনুক মাশরুমের নির্যাস থেকে খুশকি  প্রতিরোধী ঔষধ তৈরি করা হয়।


৪. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ প্রতিরোধেঃ


 মাশরুমে কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টটিন, এনটাডেনিন, কিটিন এবং ভিটামিন বি, সি ও ডি থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিরাময় হয়।


৫. দাঁত ও হাড় গঠনেঃ


 মাশরুমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি আছে। শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে এই উপাদানগুলো অত্যন্ত কার্যকরী।


৬. ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধেঃ


মাশরুমের বেটা-ডি, ল্যামপট্রোল, টারপিনয়েড ও বেনজো পাইরিন আছে যা ক্যানসার ও টিউমার প্রতিরোধ করে। ফ্রান্সবাসী পর্যাপ্ত পরিমাণ মাশরুম খান বলে গত এক শতাব্দী ধরে ক্যানসার রোগের প্রাদুর্ভাব কম বলে দাবি করা হয়। সম্প্রতি জাপানের জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মাশরুমের ক্যানসার প্রতিহত করার ক্ষমতা আছে।


৭. মাশরুম এইডস প্রতিরোধকঃ


 মাশরুমে ট্রাইটারপিন থাকাতে বর্তমানে এটি বিশ্বে এইডস প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।


৮. আমাশয় রোগ নিরাময়ে মাশরুমঃ


মাশরুমে ইলুডিন এম ও এস থাকাতে আমাশয়ে উপকারী।


৯. হাইপার টেনশনঃ


মাশরুমে স্ফিংগলিপিড এবং ভিটামিন-১২ বেশি থাকায় স্নায়ুতন্ত্র ও স্পাইনাল কর্ড সুস্থ রাখে। তাই মাশরুম খেলে হাইপার টেনশন দূর হয় এবং মেরুদণ্ড দৃঢ় থাকে।


১০. পেটের পীড়ায় ও প্রোটিন যোগানেঃ


মাশরুমে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন আছে। এই প্রোটিন সুস্বাদু ও মুখরোচক। মাশরুমে পর্যাপ্ত পরিমাণ এনজাইম আছে। বিশেষতঃ ট্রিপসিন এবং অগ্নাশয় থেকে নির্গত জারকরস আছে বলে মাশরুম খাদ্য পরিপাক ও হজমে সাহায্য করে, রুচিবর্ধক এবং পেটের পীড়া নিরামক।


১১. কিডনির রোগ প্রতিরোধেঃ


মাশরুমে নিউক্লিক এসিড ও অ্যান্টি-এলার্জেন থাকায় এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকায়, কিডনি রোগ ও এলার্জি রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।


১২. চুল পড়া ও পাকা প্রতিরোধেঃ


মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে সালফার সরবরাহকারী এমাইনো এসিড থাকায়, নিয়মিত খেলে চুল পড়া ও পাকা প্রতিরোধ করে।


১৩. দৃষ্টিশক্তি রক্ষায়ঃ


মাশরুমের খনিজ লবণ চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষার জন্যও সমাদৃত।


১৪. হেপাটাইটিস-বি ও জন্ডিসঃ


মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড, লৌহ এবং লিংকজাই-৮ নামক এমাইনো এসিড থাকায় হেপাটাইটিস-বি ও জন্ডিসের প্রতিরোধক।


১৫. এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতাঃ


শরীরে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে নিয়মিত মাশরুম খেলে তা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

মাশরুমের হাজারো গুনাগুন রয়েছে। আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখুন মাশরুম। মাশরুমের উপস্থিতি আপনার খাদ্য তালিকাকে করবে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয়।


কিছু কথাঃ মাশরুমের আর এক নাম ছত্রাক। অবশ্যয় আমাদের দেশে এটি "ব্যাঙের ছাতা" নামেই পরিচিত। আরবীতে  "মান্না" ও "সালওয়া" এই ২টি নামে পরিচিত।

আমাদের দেশে হিন্দু সমাজের মানুষেরা প্রাচীনকাল থেকেই সবজি হিসেবে মাশরুম খেয়ে আসছে। অন্যদিকে মুসলমানরা বলছে ব্যাঙেরছাতা/মাশরুম  হারাম। 

পবিত্র কোরআনের সূরা "আল- বাকারা" ৫৭নং আয়াতে  আল্লাহপাক বলেন, "আমি মেঘের সাহায্যে তোমাদের  উপর ছায়া বিস্তার করলাম, তোমাদের নিকট মান্না ও সালওয়া পাঠালাম। যে সকল ভাল জিনিস দিলাম তা তোমরা আহার কর। তারা আমার প্রতি কোন জুলুম করেনি, বরং তারা তাদের প্রতি জুলুম করেছিল।" (একই কথা সুরা "আরাফেঃ ১৬০ নং আয়াতে এবং সুরা ত্বাহারঃ  ৮০ নং আয়াতে  উল্লেখ আছে।)


প্রকৃতির কথাঃ

প্রাকৃতিক উপায়ে যে কোন সুরক্ষা মানবজাতির জন্য হতে পারে মঙ্গলজনক। প্রাকৃতিক সুরক্ষার কোন ক্ষতিকর দিক না থাকায় আপনি সহজেই গ্রহণ করতে পারেন। প্রাকৃতিক সুরক্ষা গুলো একটু ধীরে ধীরে কাজ করলেও অত্যন্ত ফলদায়ক হয়ে থাকে। তাই আর নয় অনিহা কিংবা অবহেলা, আজ থেকে শুরু হোক প্রাকৃতিক সুরক্ষা।


বিঃদ্রঃ:-এই পোষ্টটি পরে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন, আপনাদের মতামত, আমাদের কে অনুপ্রাণিত করে।

আরও পড়ুন ..........










একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন