অযুর নিয়ম, নিয়ত ও দোয়া: ইসলামিক দৃষ্টিকোণ
ইসলামে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ইসলামের মূল ভিত্তিগুলির একটি। নামাজের আগে পবিত্রতার জন্য অযু করা বাধ্যতামূলক। এটি শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতার অংশ নয়, বরং আত্মার পবিত্রতাও বটে। অযু করার মাধ্যমে মুমিন তার শরীর ও আত্মাকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য প্রস্তুত করে। এই প্রবন্ধে আমরা অযুর সঠিক নিয়মাবলী, অযুর জন্য নিয়ত, এবং অযুর শেষে পাঠ করার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
অযুর নিয়ম
অযুর সময় একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও ক্রম অনুসরণ করতে হয়। অযু সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করা উচিত:
1. নিয়ত করা: অযু শুরু করার আগে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অযুর নিয়ত করা জরুরি। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতে হবে না; মনে করাই যথেষ্ট।
2. বিসমিল্লাহ বলা: অযু শুরু করার সময় "বিসমিল্লাহ" পড়া সুন্নত।
3. হাত ধোয়া: প্রথমে দু'হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
4. কুলি করা: মুখে পানি নিয়ে তিনবার কুলি করতে হবে। এতে মুখের ভিতরের অংশ পবিত্র হয়ে যায়।
5. নাকে পানি দেওয়া: নাকের ভিতরে পানি দিয়ে পরিষ্কার করা এবং নাক থেকে ময়লা বের করে দেওয়া।
6. মুখ ধোয়া: মুখ সম্পূর্ণভাবে তিনবার ধুতে হবে।
7. হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুয়ে নিতে হবে, এরপর বাম হাত একইভাবে তিনবার ধুতে হবে।
8. মাথা মাসহ করা: ভেজা হাত দিয়ে মাথার কিছু অংশ মাসহ করতে হবে। মাথার সামনে থেকে পেছনের দিকে মাসহ করা হয়।
9. কান মাসহ করা: ভেজা হাত দিয়ে দুই কান মাসহ করা। এটি একবারে করলেই যথেষ্ট।
10. পা ধোয়া: প্রথমে ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে, এরপর বাম পা একইভাবে তিনবার ধুয়ে নিতে হবে।
অযুর নিয়ত
অযুর শুরুতে নিয়ত করা হয়। এটি মূলত মন থেকে করার বিষয়। নিয়তের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অযু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। যদিও নিয়ত মনে মনে করাই যথেষ্ট, তবে অনেকেই এটি মুখে উচ্চারণ করেন।
নিয়ত (উচ্চারণ):
"নাওয়াইতু আন আতা ওয়াদ্দা আলিস সালাতি লিল্লাহি তা'আলা।"
অর্থ: "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সালাতের উদ্দেশ্যে অযু করছি।"
অযুর দোয়া
অযু শেষে আল্লাহর কাছে কিছু বিশেষ দোয়া করা সুন্নত। অযু সম্পন্ন হলে নিচের দোয়াটি পড়া যায়:
দোয়া:
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
উচ্চারণ:
"আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।"
অর্থ:
"আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই; তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।"
এই দোয়া পড়লে আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ পুরস্কারের আশা করা যায়।
অতিরিক্ত দোয়া
আরও একটি দোয়া রয়েছে, যা পড়লে জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
দোয়া:
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
উচ্চারণ:
"আল্লাহুম্মাজআলনি মিনাত তাওয়াবীন, ওয়াজআলনি মিনাল মুতাতাহ্হিরীন।"
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাকে পবিত্রতাপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”
অযুর ফজিলত
১. গুনাহ মাফ হয়: অযুর সময় শরীর থেকে পানি পড়ার সাথে সাথে আমাদের ছোট ছোট গুনাহও মাফ হয়ে যায়।
২. নামাজ কবুল হওয়ার শর্ত: নামাজের জন্য পবিত্রতা অপরিহার্য। সঠিকভাবে অযু করলে নামাজ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৩. আল্লাহর নৈকট্য অর্জন: অযুর মাধ্যমে আমাদের আত্মিক পবিত্রতা অর্জন হয়, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ তৈরি করে।
৪. শরীর ও মন উভয়েই প্রশান্তি আসে: অযু করলে শারীরিক এবং মানসিক উভয় প্রশান্তি লাভ করা যায়।
উপসংহার
অযু ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা নামাজের জন্য শারীরিক ও আত্মিকভাবে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম। সঠিকভাবে নিয়ম অনুযায়ী অযু করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় এবং এর মাধ্যমে শরীর ও আত্মা পবিত্র হয়। আল্লাহ আমাদেরকে অযু করার পদ্ধতি সঠিকভাবে শিখতে ও মানতে সাহায্য করুন।