উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া

উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া


উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া


উমরাহ হলো মুসলিমদের জন্য পবিত্র মক্কা শরীফে আল্লাহর ঘর কাবা শরীফ পরিদর্শন এবং নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত পালন করা। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং হজের মতোই পূণ্যবাহী হলেও, এটি বছরের যেকোনো সময়ে পালন করা যায়। উমরাহ পালনের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, গুনাহ থেকে মুক্তি এবং আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করেন। এই প্রবন্ধে উমরাহর নিয়মাবলী ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।


উমরাহর নিয়মাবলী


উমরাহর গুরুত্বপূর্ণ চারটি ফরয কাজ রয়েছে যা পালন করা আবশ্যক। এগুলো হলো ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ এবং চুল কাটা বা ছোট করা। এবার প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:


১. ইহরাম বাঁধা


উমরাহ শুরুর প্রথম ধাপ হলো ইহরাম বাঁধা। এটি পবিত্রতার প্রতীক এবং এটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে। ইহরাম বাঁধার জন্য কিছু নিয়ম পালন করতে হয়:


ইহরামের নিয়ত: উমরাহ পালনের জন্য ইহরাম বাঁধার সময় নিয়ত করতে হয়। ইহরামের নিয়ত এই দোয়া দ্বারা করা হয়:


 اللهم لبيك عمرة

উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা লাব্বাইক উমরাতান।"


অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিচ্ছি উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে।"




তালবিয়া পাঠ করা: ইহরাম বাঁধার পর তালবিয়া পাঠ করা জরুরি। এটি বলতে হয় বারবার:


 لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ

উচ্চারণ: "লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক।"


অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই, সমস্ত প্রশংসা, নিয়ামত এবং রাজত্ব আপনারই জন্য, আপনার কোনো শরিক নেই।"





২. মসজিদুল হারামে প্রবেশ


ইহরাম বাঁধার পর মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে হয়। প্রবেশের সময় আল্লাহর ঘরে প্রবেশের বিশেষ দোয়া পড়া উত্তম:


 بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُولِ الله، اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

উচ্চারণ: "বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লাহুম্মা ইফতাহলি আবওয়াবা রহমাতিক।"


অর্থ: "আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং সালাম ও দোয়া প্রিয় রাসূলের জন্য। হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন।"




৩. কাবা শরীফে তাওয়াফ করা


মসজিদুল হারামে প্রবেশের পর প্রথম কাজ হলো কাবা শরীফের তাওয়াফ করা। এটি সাতবার কাবা শরীফ প্রদক্ষিণ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। তাওয়াফ শুরুর সময় এই দোয়া করা হয়:


 بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ

উচ্চারণ: "বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।"


অর্থ: "আল্লাহর নামে এবং আল্লাহ মহান।"




প্রত্যেক চক্করের সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা, রহমত ও বরকতের দোয়া করতে হয়। এছাড়া হজরে আসওয়াদে (কালো পাথরে) হাত লাগানোর চেষ্টা করা হয়, যদিও তা বাধ্যতামূলক নয়।


৪. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাঈ


তাওয়াফ শেষে সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সাতবার সাঈ করতে হয়। প্রথমে সাফা পাহাড়ে উঠে কাবা শরীফের দিকে তাকিয়ে তাকবির, তাওহিদ এবং প্রশংসার দোয়া পাঠ করতে হয়:


 إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ

উচ্চারণ: "ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা'আইরিল্লাহ।"


অর্থ: "নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৫৮)




এরপর সাফা থেকে মারওয়া এবং মারওয়া থেকে সাফায় আসা-যাওয়া করতে হয় সাতবার। এ সময় নিজের জন্য এবং সকলের জন্য দোয়া করা যায়।


৫. মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করা


সাঈ শেষ করার পর মাথা মুন্ডন করা (পুরুষদের জন্য) বা চুল সামান্য ছোট করা (নারীদের জন্য) আবশ্যক। এটি উমরাহ সম্পন্ন হওয়ার শেষ ধাপ এবং এটি দ্বারা ইহরাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


উমরাহর দোয়া ও তাৎপর্য


উমরাহর প্রতিটি ধাপের সঙ্গে সম্পর্কিত দোয়া ও আমল আমাদের আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটায়। এসব দোয়া কেবল শব্দ নয়, বরং এর মধ্যে লুকিয়ে আছে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক আরও মজবুত করার গভীর আকাঙ্ক্ষা। উমরাহ পালনকারী মুসলিমগণ আল্লাহর ঘরে এসে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমতের জন্য প্রার্থনা করেন।


উপসংহার


উমরাহ হলো পবিত্র মক্কা শরীফে আল্লাহর ঘরে কাবা প্রদক্ষিণ ও নির্দিষ্ট ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। সঠিক নিয়মে উমরাহ সম্পন্ন করলে আল্লাহর নৈকট্য ও ক্ষমা লাভের আশ্বাস রয়েছে। এই ইবাদতের মাধ্যমে মুসলিমগণ তাদের আত্মাকে পবিত্র করতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারেন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন