হযরত ঈসা (আঃ)-এর জীবনী

হযরত ঈসা (আঃ)-এর জীবনী


হযরত ঈসা (আঃ)-এর জীবনী: এক মহৎ নবীর জীবন ও শিক্ষা

পরিচিতি

হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর একজন মহান নবী এবং ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি বনী ইসরাইলের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন এবং তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। কুরআনে হযরত ঈসা (আঃ)-কে ২৫টি স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাঁকে ইনজিল (গসপেল) নামক গ্রন্থ প্রদান করেন।

অলৌকিক জন্ম

হযরত ঈসা (আঃ)-এর জন্ম ছিল একটি মুজিজা। তাঁর মা হযরত মরিয়ম (আঃ) ছিলেন পবিত্র ও নেককার একজন নারী। আল্লাহর হুকুমে কোনো পিতার সম্পৃক্ততা ছাড়াই হযরত ঈসা (আঃ)-এর জন্ম হয়। কুরআনের সূরা মারইয়ামে এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। জন্মের পর থেকেই ঈসা (আঃ)-এর জীবন ছিল আল্লাহর বিশেষ কুদরতের পরিচায়ক।

শৈশব ও অলৌকিকতা

হযরত ঈসা (আঃ) শৈশবেই আল্লাহর অনেক মুজিজা প্রদর্শন করেন। জন্মের পরপরই তিনি মায়ের পক্ষ থেকে কথা বলেন এবং মানুষকে জানান যে, তিনি আল্লাহর প্রেরিত নবী। পরে তিনি মৃতদের জীবিত করা, জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া, এবং কঠিন অসুস্থতা আরোগ্য করার মতো মুজিজা প্রদর্শন করেন। এসবই আল্লাহর ইচ্ছায় সম্পন্ন হয়।

নবুয়ত ও দাওয়াত

হযরত ঈসা (আঃ) বনী ইসরাইলের মানুষকে তাওহিদের পথে আহ্বান করেন। তিনি আল্লাহর পথে চলার এবং গুনাহ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। তাঁর দাওয়াত ছিল পাপ থেকে মুক্তি, সৎকর্ম, এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে। তবে, তাঁর দাওয়াত অনেকেই গ্রহণ করেনি, বিশেষত ইহুদি পুরোহিতরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে।

ইনজিলের অবতারণ

আল্লাহ হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর ইনজিল নামে একটি আসমানী গ্রন্থ নাজিল করেন। এতে আল্লাহর ইবাদত, মানবতা, এবং নৈতিকতার শিক্ষা ছিল। ইনজিল মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহর এক বিশেষ নির্দেশনা ছিল।

ষড়যন্ত্র ও আল্লাহর রক্ষা

ইহুদি নেতারা হযরত ঈসা (আঃ)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। তবে, আল্লাহ তাঁকে বিশেষভাবে রক্ষা করেন। কুরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাঁকে জীবিত অবস্থায় আসমানে তুলে নেন এবং তাঁর স্থলে অন্য একজনকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়।

পুনরাগমন

ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, হযরত ঈসা (আঃ) কিয়ামতের পূর্বে আবার পৃথিবীতে আগমন করবেন। তখন তিনি দাজ্জালকে পরাজিত করবেন এবং পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর পুনরাগমন মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস।

শিক্ষা ও উপদেশ

হযরত ঈসা (আঃ)-এর জীবন আমাদের জন্য তাওহিদ, ধৈর্য, এবং বিনয়ের শিক্ষা দেয়। তিনি মানুষের প্রতি দয়া, ক্ষমা, এবং ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর জীবনী থেকে আমরা আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিকতা বজায় রাখার গুরুত্ব শিখি।

উপসংহার

হযরত ঈসা (আঃ)-এর জীবন আল্লাহর অসীম কুদরতের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। তাঁর জীবন থেকে আমরা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, ধৈর্য, এবং মানবতার কল্যাণে আত্মনিবেদন করার শিক্ষা পাই। তিনি ছিলেন আল্লাহর একজন প্রিয় নবী এবং তাঁর জীবনী মানবজাতির জন্য চিরকালীন দৃষ্টান্ত।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন