হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর জীবনী: ন্যায়পরায়ণতা ও সাহসিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
পরিচিতি
হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) ছিলেন বনী ইসরাইলের একজন মহান নবী এবং হযরত যাকারিয়া (আঃ)-এর পুত্র। আল্লাহ তাঁকে বিশেষ গুণাবলি ও পবিত্রতা দান করেছিলেন। তিনি নবুয়তের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ন্যায়, সততা এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
অলৌকিক জন্ম
হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর জন্ম ছিল আল্লাহর এক বিশেষ কুদরতের নিদর্শন। তাঁর পিতা হযরত যাকারিয়া (আঃ) এবং মাতা উভয়েই ছিলেন বৃদ্ধ। এ অবস্থায় আল্লাহ হযরত যাকারিয়া (আঃ)-এর দোয়া কবুল করেন এবং তাঁকে পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দেন। কুরআনে বর্ণিত আছে যে, তাঁর নামও আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়েছিল:
"হে যাকারিয়া, আমরা তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি, যার নাম হবে ইয়াহিয়া।"
(সূরা মারইয়াম, ১৯:৭)
গুণাবলি
আল্লাহ হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-কে অসাধারণ গুণাবলির অধিকারী করে সৃষ্টি করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক, পরহেজগার, এবং বিনয়ী। কুরআনে বলা হয়েছে, তিনি সৎকর্মশীল, দয়ালু এবং পিতামাতার প্রতি অত্যন্ত ভক্তিশীল ছিলেন।
নবুয়ত ও দাওয়াত
আল্লাহ তাঁকে নবুয়তের দায়িত্ব দেন এবং তিনি মানুষকে তাওহিদের পথে আহ্বান করেন। তিনি বনী ইসরাইলকে আল্লাহর বিধান মেনে চলতে এবং পাপ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিতেন। হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) নিষ্ঠুর শাসকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেন।
আত্মসংযম ও সাধনা
হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) ছিলেন অত্যন্ত সহজ-সরল জীবনযাপনের অনুসারী। তিনি দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে সমর্পিত করেন। তাঁর জীবনে আত্মসংযম ও আধ্যাত্মিকতার প্রতিফলন ছিল।
মৃত্যু ও শাহাদাত
ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর সাহসী ও সত্যবাদী অবস্থান শাসকদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। এক দুষ্ট শাসক তাঁর ন্যায়পরায়ণতার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। শেষ পর্যন্ত তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর শাহাদাতের ঘটনা আমাদের জন্য এক গভীর শিক্ষা।
শিক্ষা ও উপদেশ
হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর জীবনী আমাদের ন্যায়, সততা, এবং আল্লাহর প্রতি বিনম্র থাকার শিক্ষা দেয়। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, একজন সত্যিকারের নবী কিভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে পারেন এবং মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারেন।
উপসংহার
হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর জীবন আল্লাহর পথে ত্যাগ, ধৈর্য, এবং সত্যের প্রতি অবিচল থাকার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাঁর জীবনী আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি আস্থা, ন্যায়পরায়ণতা, এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিকতা বজায় রাখার গুরুত্ব উপলব্ধি করায়।