ভরা পেটে ডায়াবেটিস: কত হলে রক্তের শর্করা স্বাভাবিক?

ভরা পেটে ডায়াবেটিস: কত হলে রক্তের শর্করা স্বাভাবিক?


ভরা পেটে ডায়াবেটিস: কত হলে রক্তের শর্করা স্বাভাবিক?


ডায়াবেটিস বা মধুমেহ একটি সাধারণ, তবে গুরুতর রোগ, যা শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। যেহেতু খাবারের পর রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তাই "ভরা পেটে ডায়াবেটিস" বা খাওয়ার পরের সময় শর্করা পরিমাণ সম্পর্কিত বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে জানবো, খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কী পরিমাণ হলে স্বাভাবিক বলা যায় এবং এর কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত।


ভরা পেটে ডায়াবেটিস কী?


ভরা পেটে ডায়াবেটিস বলতে বোঝানো হয়, যে পরিমাণ শর্করা (গ্লুকোজ) আমাদের রক্তে থাকে, তা খাওয়ার পর উঠানোর সময় কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত, খাবারের পর গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু যদি তা অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তবে তা ডায়াবেটিসের ইঙ্গিত হতে পারে।


খাওয়ার পর শর্করার মাত্রা কত হলে তা স্বাভাবিক?


ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ দুটি সময়ের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়:


1. খালি পেটে (ফাস্টিং): এটি সাধারণত সকালে, খাওয়ার আগে পরীক্ষা করা হয়। সাধারণত ৭০-১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL) রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়।



2. ভরা পেটে (পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল): খাবারের পর দুই ঘণ্টার মধ্যে রক্তে শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়। স্বাভাবিক রক্তে শর্করার পরিমাণ ১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL) বা তার কম হতে হবে।




ডায়াবেটিসের নির্ণয়


খাওয়ার পর রক্তে শর্করার পরিমাণ যদি ১৪০-১৯৯ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL) হয়, তবে তা প্রি-ডায়াবেটিস (অবস্থার প্রাথমিক পর্যায়) হিসেবে বিবেচিত হয়। যদি তা ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি হয়, তবে তা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সংকেত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের নিশ্চিতকরণ করা হয়।


প্রভাব এবং ঝুঁকি


ভরা পেটে অত্যধিক শর্করা, বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য, বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে:


হৃদরোগ: ডায়াবেটিসের কারণে হৃদপিণ্ডের সমস্যা বাড়তে পারে, কারণ এটি রক্তচাপ এবং রক্তে চর্বির পরিমাণ বাড়াতে পারে।


কিডনির ক্ষতি: দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ রক্তশর্করা কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।


অস্টিওপোরোসিস: হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া।


অস্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি: অতিরিক্ত শর্করা চোখের রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দেয়।



কীভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা যায়?


1. সঠিক খাদ্যাভ্যাস: খাবারে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। শাকসবজি, প্রোটিন, ও পূর্ণ শস্য বেশি করে খাওয়া উচিত। পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে শরীরে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।



2. নিয়মিত ব্যায়াম: শারীরিক কার্যকলাপ যেমন হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের ব্যায়াম করুন।



3. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কমানো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সঠিক খাদ্য এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা উচিত।



4. ঔষধের ব্যবহৃততা: যদি রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করতে হতে পারে।



5. নিয়মিত পরীক্ষা: রক্তের শর্করা পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিসের রোগীরা নিয়মিত তাদের শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখে যে, তাদের শর্করা স্বাভাবিক সীমার মধ্যে আছে কি না।




উপসংহার


ভরা পেটে ডায়াবেটিস রক্তে শর্করার মাত্রার উপর নির্ভরশীল, যা খাওয়ার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বৃদ্ধি পায়। যদি এটি স্বাভাবিক সীমার মধ্যে থাকে, তবে তা সুস্থতা নির্দেশ করে। তবে যেকোনো সময়ে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে তা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন