ফিতরা বা সাদাকাতুল ফিতর ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ দান, যা ঈদুল ফিতরের আগেই আদায় করা হয়। এটি রোজার পরিশুদ্ধি ও গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করার জন্য নির্ধারিত একটি সাদকা। ফিতরা দেওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম ও যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা রয়েছে, যা প্রত্যেক মুসলমানের জানা উচিত। আসুন, ফিতরা দেওয়ার নিয়ম, কারা এটি পাওয়ার যোগ্য এবং এর ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
ফিতরা দেওয়ার নিয়ম
ফিতরা দেওয়ার জন্য ইসলামে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে, যা অনুসরণ করা জরুরি।
ফিতরার পরিমাণ:
ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় খাদ্যশস্য বা অর্থের মাধ্যমে।
সাধারণত ২.৫ কেজি গম বা এর সমমূল্য অর্থ ফিতরা হিসেবে দেওয়া হয়।
কেউ চাইলে খেজুর, যব, কিশমিশ, বা অন্য খাদ্যদ্রব্য দিয়েও ফিতরা আদায় করতে পারেন।
ফিতরা দেওয়ার সময়:
ঈদুল ফিতরের আগেই ফিতরা প্রদান করা উত্তম।
ঈদের নামাজের আগে ফিতরা প্রদান করা সুন্নত।
কেউ যদি ঈদের পর ফিতরা দেন, তবে তা সাধারণ সাদকা হিসেবে গণ্য হবে।
কে ফিতরা দিতে বাধ্য?
যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, সে ফিতরা দিতে বাধ্য।
পরিবারের প্রধান ব্যক্তি তার অধীনস্ত সকল সদস্যের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করবেন, যদি তারা নিজেরা সক্ষম না হন।
কারা ফিতরা পাওয়ার যোগ্য?
ফিতরা পাওয়ার জন্য ইসলামে নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতার শর্ত রয়েছে। নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা ফিতরা পাওয়ার উপযুক্ত:
গরিব ও দরিদ্র: যারা মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম।
অসহায় ও নিঃস্ব: যাদের সম্পদ নেই এবং কোনো স্থায়ী আয়ের উৎস নেই।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি: যারা ঋণের কারণে আর্থিকভাবে সংকটে আছেন।
মুসলিম বন্দি: যারা অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি এবং মুক্তির জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।
বিদেশে আটকে পড়া মুসাফির: যারা ভ্রমণে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছেন এবং ঘরে ফেরার সামর্থ্য নেই।
ফিতরার ফজিলত
ফিতরা দেওয়ার অসংখ্য ফজিলত রয়েছে, যা কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত হলো:
রোজার পরিশুদ্ধি: ফিতরা রোজার মধ্যে হওয়া ভুলত্রুটি ও ত্রুটির কাফফারা স্বরূপ।
গরিবদের সাহায্য: এটি গরিবদের জন্য ঈদ উদযাপনের সুযোগ করে দেয়।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ: মহানবী (সা.) বলেছেন, "ঈদের নামাজের আগে ফিতরা প্রদান করা উত্তম ও সুন্নত।"
দানশীলতা ও উদারতা বৃদ্ধি: এটি মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতি ও দানশীলতা বাড়ায়।
উপসংহার
ফিতরা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নির্ধারিত। এটি শুধু দানের কাজ নয়, বরং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমও। তাই আমাদের উচিত সময়মতো ফিতরা আদায় করা এবং এটি প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া, যেন সবাই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।