বর্তমান ব্যস্ত জীবনযাত্রায় স্ট্রেস (মানসিক চাপ) আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। অতিরিক্ত চাপ শরীর ও মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করলে স্ট্রেস কমানো সম্ভব। আজ আমরা স্ট্রেস কমানোর কিছু কার্যকর উপায় সম্পর্কে জানবো।
1. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
শারীরিক ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে খুবই কার্যকর।
করণীয়:
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন।
যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন চর্চা করুন।
সাইকেল চালানো, নাচা বা পছন্দের খেলাধুলায় অংশ নিন।
উপকারিতা:
শরীরে এন্ডরফিন (হ্যাপি হরমোন) নিঃসৃত হয়।
মানসিক চাপ কমে ও মেজাজ ফ্রেশ থাকে।
ঘুম ভালো হয়।
2. পর্যাপ্ত ঘুম নিন
পর্যাপ্ত ও গুণগত মানসম্পন্ন ঘুম স্ট্রেস কমানোর অন্যতম কার্যকর উপায়।
করণীয়:
প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান ও ঘুমের আগে মোবাইল ব্যবহার কমান।
ক্যাফেইন ও ভারী খাবার রাতে এড়িয়ে চলুন।
উপকারিতা:
মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়।
দুশ্চিন্তা ও ক্লান্তি কমে।
মন ভালো থাকে ও একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়।
3. মেডিটেশন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন
মেডিটেশন ও গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
করণীয়:
প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে ধ্যান করুন।
গভীর শ্বাস নিন ও ধীরে ধীরে ছাড়ুন।
নিরিবিলি পরিবেশে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন।
উপকারিতা:
মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়।
স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমায়।
মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ায়।
4. ভালো খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
সঠিক পুষ্টিকর খাবার স্ট্রেস কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
করণীয়:
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চিনি এড়িয়ে চলুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন ও হালকা স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার (বাদাম, শাকসবজি, কলা) বেশি খান।
উপকারিতা:
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
শক্তি ও মানসিক স্থিরতা বজায় থাকে।
স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
5. শখের কাজ করুন
নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য শখের কাজ করা খুবই উপকারী।
করণীয়:
গান শুনুন, বই পড়ুন, ছবি আঁকুন বা বাগান করুন।
নতুন কিছু শিখুন, যেমন: রান্না, নতুন ভাষা বা মিউজিক বাজানো।
সময় বের করে নিজেকে উপভোগ করুন।
উপকারিতা:
মন ভালো থাকে ও স্ট্রেস কমে।
সৃজনশীলতা ও আত্মতৃপ্তি বৃদ্ধি পায়।
একঘেয়েমি দূর হয়।
6. পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটান
প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটালে মন হালকা হয় ও মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়।
করণীয়:
পরিবারের সদস্যদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন বা বাইরে ঘুরতে যান।
মানসিক চাপ কমাতে হাসি-ঠাট্টা ও আনন্দদায়ক কার্যক্রমে অংশ নিন।
উপকারিতা:
একাকীত্ব ও দুশ্চিন্তা দূর হয়।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
7. ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন
মনকে নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে রাখা স্ট্রেস কমানোর অন্যতম উপায়।
করণীয়:
ছোট ছোট জিনিসে আনন্দ খুঁজে নিন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন ও প্রতিদিনের অর্জনগুলোর মূল্যায়ন করুন।
নেতিবাচক লোকজন ও পরিবেশ থেকে দূরে থাকুন।
উপকারিতা:
আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
মানসিক শান্তি বজায় থাকে।
সুখী ও ইতিবাচক জীবনযাপন সম্ভব হয়।
উপসংহার
স্ট্রেস কমানো আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মেডিটেশন, ভালো খাদ্যাভ্যাস এবং ইতিবাচক চিন্তা করে সহজেই মানসিক চাপ কমানো সম্ভব। প্রতিদিন কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন এবং সুস্থ ও সুখী থাকুন। আরও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ পেতে এই ব্লগটি দেখুন।