আজকাল অনেকেই মনে করেন ফিট থাকার জন্য অবশ্যই জিমে যেতে হবে, কিন্তু বাস্তবে এমন অনেক উপায় আছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি জিমে না গিয়েও ফিট থাকতে পারেন। ঘরে বসে, দৌড়ে, সাইকেল চালিয়ে বা অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আপনি শরীর সুস্থ এবং ফিট রাখতে পারেন। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব জিম না করেও ফিট থাকার উপায় নিয়ে।
1. নিয়মিত হাঁটা বা দৌড়ানো
ফিট থাকার সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী উপায় হলো নিয়মিত হাঁটা বা দৌড়ানো। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা দৌড়ানো শরীরের নানা পেশীকে সক্রিয় করে এবং আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি আপনার শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং শক্তি বাড়ায়।
করণীয়:
প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে হাঁটতে বের হন।
যদি সম্ভব হয়, কিছুটা দৌড়ান।
উপকারিতা:
হাড় শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
শরীরের মেদ কমে এবং পেশী সুগঠিত হয়।
2. বাসার কাজ করেই শরীর চর্চা
আপনি যদি ঘরোয়া কাজ করেন, তবে এটি আপনার শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। বাসার কাজ যেমন ঝাড়ু দেওয়া, বাসন মাজার মতো কাজ গুলো আপনাকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখে। প্রতিদিন এই কাজগুলো করলে আপনি জিমে না গিয়ে অনেকটা ক্যালোরি পোড়াতে পারবেন।
করণীয়:
ঘর পরিষ্কার রাখা বা অন্যান্য কাজের মাধ্যমে শরীরচর্চা করুন।
নিয়মিত বাড়ির কাজে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করুন।
উপকারিতা:
মাংসপেশী ও হাড় শক্তিশালী হয়।
শরীরের চলাচল বৃদ্ধি পায়।
3. যোগব্যায়াম ও স্ট্রেচিং
যোগব্যায়াম ও স্ট্রেচিং জিম ছাড়াই শরীরকে ফিট রাখার খুবই কার্যকর উপায়। এটি শুধু শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে না, পাশাপাশি মানসিক শান্তিও দেয়। যোগব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং বিভিন্ন পেশীকে মসৃণ করে এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি করে।
করণীয়:
প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট যোগব্যায়াম করুন।
স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে শরীরের সব পেশী শিথিল করুন।
উপকারিতা:
লিগামেন্ট এবং পেশীর নমনীয়তা বাড়ে।
মনের শান্তি এবং প্রশান্তি আসে।
4. ঘরেই ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন
ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের মাধ্যমে আপনি শরীরের বিভিন্ন অংশে কাজ করতে পারেন। এ ধরনের এক্সারসাইজের মধ্যে স্কোয়াট, পুশ-আপ, সিট-আপ, লঞ্জ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এগুলি জিমে না গিয়ে সহজেই ঘরেই করা সম্ভব।
করণীয়:
দিনে ২০-৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করুন।
স্কোয়াট, পুশ-আপ, সিট-আপ নিয়মিত করুন।
উপকারিতা:
মাংসপেশী এবং হাড় শক্তিশালী হয়।
স্ট্যামিনা বাড়ায় এবং শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমায়।
5. সুস্থ খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
ফিট থাকার জন্য শুধু শরীরচর্চা নয়, সঠিক খাদ্যাভ্যাসও প্রয়োজন। পুষ্টিকর খাবার খেলে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি পাওয়া যায়। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর ডায়েট আপনাকে ফিট থাকতে সাহায্য করে।
করণীয়:
প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারযুক্ত খাবার খান।
প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত চিনি এড়িয়ে চলুন।
উপকারিতা:
শরীরের সঠিক পুষ্টি পাওয়া যায়।
শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুস্থ থাকে।
6. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানি পানের মাধ্যমে শরীরের টক্সিন বের হয়ে যায় এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া ভালোভাবে চলে। পানি শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখে, যা ফিট থাকতে সহায়ক।
করণীয়:
প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
খাওয়ার আগে এবং পরে পানি পান করতে ভুলবেন না।
উপকারিতা:
শরীরের টক্সিন বের হয়।
ত্বক সতেজ থাকে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া সচল থাকে।
7. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম
জিমে না যাওয়ার আরেকটি উপায় হলো পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম নেওয়া। শরীর সুস্থ রাখতে ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের পুনরুদ্ধার এবং শক্তি বাড়ানোর জন্য অপরিহার্য।
করণীয়:
প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুমান।
ঘুমের সময় শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন।
উপকারিতা:
শরীর পুনরুদ্ধার হয় এবং শক্তি ফিরে আসে।
মেটাবলিজমে সহায়তা করে এবং মস্তিষ্ক কার্যকর থাকে।
8. মনোযোগ দিন মানসিক স্বাস্থ্যেও
শরীরের পাশাপাশি মনও সুস্থ থাকতে হবে। মানসিক চাপ কমালে, উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখলে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে শরীরও স্বাভাবিকভাবে সুস্থ থাকে।
করণীয়:
মেডিটেশন করুন বা শখের কাজ করুন।
প্রাকৃতিক দৃশ্যে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন।
উপকারিতা:
মানসিক চাপ কমায়।
শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মন শান্ত থাকে।
উপসংহার
জিম না করেও ফিট থাকা সম্ভব। হাঁটা, যোগব্যায়াম, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের মাধ্যমে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন। সঠিক জীবনযাপন, খাওয়া-দাওয়া এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে আপনি আপনার শরীর সুস্থ এবং ফিট রাখতে পারবেন, এবং এর ফলে আপনার দৈনন্দিন জীবন আরো কার্যকরী হবে। বিস্তারিত জানতে, দয়া করে এখানে ক্লিক করুন।