বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে, তবে তাদের মধ্যে কিছু ওয়েবসাইট সত্যিকারের এবং কিছু ভুয়া (ফেক)। ভুয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে অথবা ভুয়া পণ্য বা সেবা সরবরাহ করতে পারে। এই ধরনের ওয়েবসাইট চেনার জন্য কিছু সহজ এবং কার্যকরী উপায় রয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো কীভাবে আপনি ভুয়া ওয়েবসাইট চিনতে পারবেন।
১. HTTPS নিরাপত্তা যাচাই করুন
প্রথমে, যে কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার আগে তার URL চেক করুন।
সঠিক এবং নিরাপদ ওয়েবসাইটের URL-এ “https://” থাকে, যেখানে “S” মানে Secure।
যদি ওয়েবসাইটে “http://” থাকে, তবে এটি সম্ভবত ভুয়া বা নিরাপত্তাহীন হতে পারে।
HTTPS ব্যবহার করা ওয়েবসাইটে আপনার তথ্য সুরক্ষিত থাকবে।
২. ওয়েবসাইটের ডিজাইন ও কন্টেন্ট চেক করুন
ভুয়া ওয়েবসাইটগুলোর ডিজাইন সাধারণত অপরিপক্ব বা নিম্নমানের হয়।
বিকৃত লোগো, গ্রামাটিক্যাল ত্রুটি এবং ছবি বা গ্রাফিক্সের অনুপস্থিতি ভুয়া ওয়েবসাইটের লক্ষণ হতে পারে।
এছাড়া, ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট যদি অদ্ভুত বা অসম্পূর্ণ হয়, তবে সেটি ভুয়া হতে পারে।
৩. ওয়েবসাইটের যোগাযোগ তথ্য পরীক্ষা করুন
যেকোনো প্রামাণিক ওয়েবসাইটে যোগাযোগের তথ্য পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকে।
ফোন নম্বর, ইমেইল এবং অফিসের ঠিকানা দেওয়া থাকে।
ভুয়া ওয়েবসাইটের যোগাযোগ তথ্য সাধারণত অস্পষ্ট বা ভূয়া হয়, এবং কখনোই কোন প্রামাণিক যোগাযোগের উপায় থাকে না।
৪. ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম চেক করুন
ভুয়া ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম সাধারণত অদ্ভুত বা সাধারণ কোম্পানির নামের সাথে মিলে না।
এক নজরে, অদ্ভুত ডোমেইন নাম যেমন example123.com বা xyz-xyz.org সন্দেহজনক হতে পারে।
প্রামাণিক ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম সাধারণত ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের নামে হয় এবং কমপক্ষে ১ বছরের পুরনো হয়।
৫. ওয়েবসাইটের প্রাইভেসি পলিসি চেক করুন
যেকোনো ওয়েবসাইটের একটি প্রাইভেসি পলিসি থাকা উচিত, যেখানে ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার এবং শেয়ার করার নিয়মাবলী উল্লেখ থাকে।
ভুয়া ওয়েবসাইটে সাধারণত প্রাইভেসি পলিসি বা টার্মস অফ সার্ভিস নেই বা এগুলি অস্পষ্ট থাকে।
সুতরাং, প্রাইভেসি পলিসি না থাকলে ওয়েবসাইটটি পরিহার করুন।
৬. অনলাইন রিভিউ ও রেটিং চেক করুন
ওয়েবসাইটটির অনলাইন রিভিউ এবং রেটিং দেখে তার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করুন।
গুগল বা অন্যান্য রিভিউ সাইটে ওয়েবসাইটটির রিভিউ চেক করে দেখুন।
যদি রিভিউ খুবই খারাপ বা গাঢ় রঙের হয়, তবে ওয়েবসাইটটি ভুয়া হতে পারে।
৭. ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা সার্টিফিকেট চেক করুন
প্রত্যেকটি প্রামাণিক ওয়েবসাইটের একটি নিরাপত্তা সার্টিফিকেট থাকে।
ওয়েবসাইটের ঠিকানার পাশে লক চিহ্ন দেখতে পাবেন যদি সেটি নিরাপদ হয়।
যদি এটি না থাকে, তাহলে সাইটটি ভুয়া হতে পারে বা নিরাপত্তাহীন হতে পারে।
৮. ওয়েবসাইটের পেমেন্ট পদ্ধতি যাচাই করুন
ভুয়া ওয়েবসাইটে সাধারণত অবৈধ পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
পেমেন্টের জন্য অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক গেটওয়ে ব্যবহার করা হয়।
প্রামাণিক ওয়েবসাইটগুলি সাধারণত পরিচিত এবং সুরক্ষিত পেমেন্ট গেটওয়ে যেমন PayPal, Stripe, বা Credit/Debit Card ব্যবহার করে।
৯. ওয়েবসাইটের স্প্যাম আচরণ চেক করুন
যদি কোনো ওয়েবসাইট অস্বাভাবিকভাবে আপনাকে অনবরত বিজ্ঞাপন বা পপ-আপ দেখায়, তবে তা একটি ভুয়া ওয়েবসাইট হতে পারে।
ভুয়া ওয়েবসাইট সাধারণত ব্যবহারকারীর প্রবেশের সাথে সাথে বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন বা অতিরিক্ত পপ-আপ দেখায়।
১০. ওয়েবসাইটের সার্চ র্যাঙ্ক চেক করুন
প্রামাণিক ওয়েবসাইটগুলি সাধারণত গুগল সার্চ ইঞ্জিনে ভালোভাবে র্যাঙ্কিং পায়।
আপনি যদি ওয়েবসাইটটির নাম গুগলে সার্চ করে দেখেন এবং এটি খুব বেশি র্যাঙ্ক না করে, তবে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে।
উপসংহার: সতর্ক থাকুন এবং সুরক্ষিত থাকুন
এখন আপনি জানেন কীভাবে ভুয়া ওয়েবসাইট চেনা যায়। ইন্টারনেটের বিশাল জগতে নিরাপদ থাকার জন্য এই টিপসগুলো অনুসরণ করুন এবং সতর্ক থাকুন। ভুয়া ওয়েবসাইট থেকে আপনার তথ্য রক্ষা করতে এবং সাইবার আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে নিয়মিত এদের যাচাই করুন।
আরো টিপস ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত আপডেট পেতে ঘুরে আসুন – usdate.blogspot.com