ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া—দু’টি-ই অদৃশ্য জীবাণু, যা রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে এদের গঠন, বৃদ্ধি, প্রজনন, ও কার্যপ্রণালী একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার পার্থক্য জানা অত্যন্ত জরুরি। চলুন জেনে নিই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য।
১. গঠনগত পার্থক্য
ভাইরাস শুধুমাত্র প্রোটিন ও জিনগত উপাদান (DNA বা RNA) দিয়ে গঠিত, যেখানে ব্যাকটেরিয়া একটি সম্পূর্ণ কোষ (cell) এবং এদের রয়েছে সাইটোপ্লাজম, সেল মেমব্রেন ও নিউক্লয়েড।
২. প্রজনন প্রক্রিয়া
ভাইরাস জীবিত কোষে প্রবেশ না করলে নিজে থেকে বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়া নিজেরাই কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।
৩. জীবন্ত না নিঃজীব?
ভাইরাস জীবিত ও নিঃজীব উভয় বৈশিষ্ট্য বহন করে—জীবন্ত কোষের বাইরে এটি কার্যক্ষম নয়। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া সর্বদা জীবন্ত এবং নিজের চক্র চালাতে সক্ষম।
৪. আকারে পার্থক্য
ভাইরাস সাধারণত ২০-৩০০ ন্যানোমিটার আকারের হয়, যেখানে ব্যাকটেরিয়া তুলনামূলকভাবে অনেক বড়—০.২ থেকে ১০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
৫. অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিক্রিয়া
ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে, কিন্তু ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। ভাইরাসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ও ভ্যাকসিন প্রয়োজন।
৬. রোগ সৃষ্টি
ভাইরাস যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, কোভিড-১৯, ডেঙ্গু ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে, আর ব্যাকটেরিয়া যেমন টাইফয়েড, টিউবারকুলোসিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে।
৭. শক্তি উৎপাদন
ব্যাকটেরিয়া নিজের শক্তি উৎপাদনে সক্ষম হলেও, ভাইরাস নিজের কোনো শক্তি উৎপাদন করতে পারে না।
৮. পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা
ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন কঠিন পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। কিন্তু ভাইরাস শুধুমাত্র জীবন্ত কোষে সক্রিয় হয়, অন্যথায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
৯. জীবনচক্র
ভাইরাসের জীবনচক্র দুইটি পর্যায়ে চলে—লাইটিক ও লাইসোজেনিক। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত একটি নিরবচ্ছিন্ন কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।
১০. ব্যবহারিক গুরুত্ব
ব্যাকটেরিয়া অনেক ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে (যেমন: খাদ্য হজম, দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন), কিন্তু ভাইরাস প্রায়শই ক্ষতিকর এবং রোগের কারণ হয়।
উপসংহার
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে এই পার্থক্যগুলো জানা থাকলে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সচেতনতায় অনেকটা অগ্রগতি সম্ভব। আমাদের উচিত যেকোনো সংক্রমণের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া। আরও স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ব্লগ।