নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি ছিলেন সবার জন্য রহমত, কিন্তু কিছু সাহাবী ছিলেন তাঁর হৃদয়ের খুব কাছের। তাঁরা শুধু সাহাবীই নন, বরং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসা, আস্থা ও স্নেহে বিশেষভাবে স্থান লাভ করেছিলেন। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা জানব সেই প্রিয় সাহাবীদের নাম ও তাঁদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
সাহাবী কারা এবং প্রিয় সাহাবী বলার মানদণ্ড
সাহাবী বলা হয় তাঁকেই, যিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে জীবদ্দশায় দেখে ঈমান এনেছেন এবং ঈমানসহ দুনিয়া ত্যাগ করেছেন। প্রিয় সাহাবীরা তাঁরা, যাঁরা নবীজির একান্ত সান্নিধ্য, ভরসা ও ভালোবাসা পেয়েছেন। তাঁদের আচরণ, ত্যাগ, চরিত্র, দাওয়াতি প্রচেষ্টা ও আত্মসমর্পণ ছিল অতুলনীয়।
নবীজির প্রিয় সাহাবীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা
১. আবু বকর আস-সিদ্দিক (রা.)
নবীজির সবচেয়ে প্রিয় সাহাবী। তিনিই সর্বপ্রথম পুরুষ, যিনি ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করেন এবং সর্বদা নবীজির পাশে ছিলেন।
২. উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং নবীজির একনিষ্ঠ সহচর। নবীজি (সা.) তাঁর বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার জন্য তাঁকে ভালোবাসতেন।
৩. উসমান ইবনে আফফান (রা.)
তিনিই ছিলেন সেই সাহাবী যিনি কুরআনের সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং তাঁর লজ্জাশীলতা নবীজিকে মুগ্ধ করত।
৪. আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)
নবীজির চাচাতো ভাই ও জামাতা। তাঁর সাহসিকতা, জ্ঞান ও বিশ্বস্ততার কারণে তিনি নবীজির অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন।
৫. জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.)
একমাত্র সাহাবী যাঁকে কুরআনে নামসহ উল্লেখ করা হয়েছে। নবীজি তাঁকে পুত্রের মতো স্নেহ করতেন।
৬. উসামা ইবনে যায়েদ (রা.)
জায়েদ ইবনে হারিসার ছেলে। নবীজির পরিবারের খুব কাছের মানুষ এবং অল্প বয়সেই তাঁকে সেনাপতি করা হয়।
৭. মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)
নবীজি (সা.) তাঁকে ইয়ামানে ইসলামের দাঈ হিসেবে পাঠান। তাঁকে উদ্দেশ করে নবীজি বলেছিলেন: “হে মুয়াজ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
৮. আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)
নবীজি তাঁকে "উম্মতের আমিন (বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি)" বলে আখ্যা দেন।
৯. তালহা ও জুবায়ের (রা.)
দুইজনই নবীজির খুব কাছের সাহাবী এবং উহুদের যুদ্ধে তাঁরা প্রাণ দিয়ে নবীজিকে রক্ষা করেন।
১০. বিলাল ইবনে রবাহ (রা.)
আযানের মুয়াজ্জিন ও প্রিয় সাহাবী। তাঁর কণ্ঠে নবীজি জান্নাতের ঘোষণা শুনেছিলেন।
প্রিয় সাহাবীদের জীবনী থেকে শিক্ষণীয় দিক
রাসূল (সা.)-এর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আনুগত্য
ইসলামের জন্য নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গ
চরিত্রে দৃঢ়তা ও বিনয়
আমলে নিষ্ঠা ও দাওয়াতে অগ্রণী ভূমিকা
উপসংহার
নবীজির প্রিয় সাহাবীরা ছিলেন ইসলামের স্তম্ভস্বরূপ। তাঁদের জীবন কাহিনী আজও আমাদের জন্য দিকনির্দেশনা। তাঁদের অনুসরণ করে আমরা আমাদের ঈমানকে মজবুত করতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে অগ্রসর হতে পারি।