পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) বর্তমানে নারীদের মধ্যে একটি সাধারণ হরমোনজনিত সমস্যা। এটি নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে এবং মাসিক চক্র, ওজন, ত্বক এবং গর্ভধারণ ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। অনেকেই জানতে চান — পলিসিস্টিক ওভারি কেন হয়, এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার কী? এই প্রবন্ধে সেই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
পলিসিস্টিক ওভারি কী?
পলিসিস্টিক ওভারি হল এমন একটি অবস্থা যেখানে নারীদের ডিম্বাশয়ে একাধিক ছোট ছোট সিস্ট (আঁশযুক্ত থলি) তৈরি হয়। এই সিস্টগুলো পূর্ণাঙ্গ ডিম্বাণুতে পরিণত হতে পারে না, যার ফলে ডিম্বস্ফোটন (ovulation) ব্যাহত হয়। এর ফলে মাসিক অনিয়ম, বন্ধ্যাত্ব এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়।
পলিসিস্টিক ওভারি হওয়ার কারণ
পিসিওএস এর সঠিক কারণ এখনও সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত নয়, তবে কিছু সাধারণ কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: বিশেষ করে অ্যান্ড্রোজেন (পুরুষ হরমোন) মাত্রা বেড়ে গেলে।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স: শরীর ইনসুলিন ঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং ডিম্বাশয়ে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে।
বংশগত প্রভাব: পরিবারের অন্য কেউ এই সমস্যায় ভুগলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস: অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, ওজন বৃদ্ধি এবং ব্যায়ামের অভাব।
পলিসিস্টিক ওভারির লক্ষণসমূহ
অনিয়মিত বা বন্ধ মাসিক
অতিরিক্ত মুখে ও শরীরে লোম গজানো (Hirsutism)
ব্রণ বা ত্বকে তৈলাক্ততা
মাথার চুল পড়ে যাওয়া
ওজন বৃদ্ধি, বিশেষ করে পেটের চারপাশে
গর্ভধারণে সমস্যা
পলিসিস্টিক ওভারি কীভাবে শনাক্ত করা হয়?
ডাক্তারি পরামর্শ ও ইতিহাস নেওয়া
রক্ত পরীক্ষা: হরমোনের মাত্রা যাচাই করতে
আলট্রাসনোগ্রাফি (Ultrasound): ডিম্বাশয়ে সিস্ট আছে কিনা দেখতে
পিসিওএস-এর প্রতিকার ও চিকিৎসা
জীবনযাপন পরিবর্তন: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম
ওজন নিয়ন্ত্রণ: ওজন কমালে মাসিক নিয়মিত হতে পারে
ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ: যেমন, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা হরমোন নিয়ন্ত্রণের ওষুধ
গর্ভধারণের জন্য চিকিৎসা: বিশেষ ওষুধ বা চিকিৎসা প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়
পলিসিস্টিক ওভারি প্রতিরোধে করণীয়
পরিমিত ক্যালোরি ও চিনি গ্রহণ
উচ্চ ফাইবার ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া
নিয়মিত ব্যায়াম ও স্ট্রেস কমানো
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা
নিজের হরমোন ও মাসিক চক্র সম্পর্কে সচেতন থাকা
উপসংহার
পলিসিস্টিক ওভারি একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। এটি সময়মতো শনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
আরও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রবন্ধ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ভিজিট করুন 👉 https://usdate.blogspot.com