হযরত সালেহ (আঃ) এর জীবনী
হযরত সালেহ (আঃ) ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত একজন মহান নবী, যিনি সমূদ জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। পবিত্র কুরআনে তাঁর জীবন, দাওয়াত, এবং সমূদ জাতির অবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর জীবনী আমাদের ধৈর্য, তাওহীদ, এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের শিক্ষা দেয়।
সমূদ জাতির পরিচয়
সমূদ জাতি ছিল হযরত নূহ (আঃ)-এর বংশধর। তারা বর্তমান সৌদি আরবের হিজর অঞ্চলে বসবাস করত। সমূদ জাতি ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী। তারা পাহাড় খোদাই করে চমৎকার ঘর তৈরি করত এবং কৃষি ও পশুপালনে পারদর্শী ছিল। কিন্তু তারা আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ ছিল এবং মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়ে পড়ে।
হযরত সালেহ (আঃ)-এর নবুয়ত
আল্লাহ তাআলা হযরত সালেহ (আঃ)-কে সমূদ জাতির প্রতি নবী হিসেবে প্রেরণ করেন। তিনি তাদের আল্লাহর দিকে আহ্বান জানান এবং মূর্তিপূজা ত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদত করতে বলেন। কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে:
“আর সমূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে প্রেরণ করলাম। তিনি বললেন, ‘হে আমার জাতি! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো উপাস্য নেই।’” (সূরা হুদ: ৬১)
উষ্ট্রীর মুজিজা
সমূদ জাতি হযরত সালেহ (আঃ)-এর কথা বিশ্বাস করেনি এবং আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য একটি বিশেষ নিদর্শন চেয়েছিল। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁদের জন্য একটি উষ্ট্রী পাঠান, যা ছিল এক বিশেষ মুজিজা। এই উষ্ট্রীকে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে সম্মান করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
হযরত সালেহ (আঃ) বলেছিলেন:
“এই উষ্ট্রী আল্লাহর নিদর্শন। তোমরা একে কষ্ট দিও না এবং এর পান করার দিনে বাধা দিও না। তা না হলে তোমাদের বড় শাস্তি গ্রাস করবে।” (সূরা শু‘আরা: ১৫৫)
সমূদ জাতির অবাধ্যতা
যদিও উষ্ট্রীকে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে দেওয়া হয়েছিল, তবুও সমূদ জাতি অবাধ্যতা প্রকাশ করে। তারা চক্রান্ত করে উষ্ট্রীটিকে হত্যা করে এবং হযরত সালেহ (আঃ)-এর প্রতি বিদ্রূপ করে। আল্লাহ তাদের এই অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
আল্লাহর শাস্তি
সমূদ জাতি আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় এক ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হয়। প্রথমে একটি ভয়ঙ্কর বজ্রপাত হয়, এরপর প্রবল ভূমিকম্পে তাদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। কুরআনে বলা হয়েছে:
“আর যারা জুলুম করেছিল, তাদেরকে একটি প্রচণ্ড বজ্রধ্বনি আঘাত করল, ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে মুখ থুবড়ে পড়ে রইল।” (সূরা হুদ: ৬৭)
সালেহ (আঃ)-এর রক্ষা
হযরত সালেহ (আঃ) এবং তাঁর অনুসারীরা এই শাস্তি থেকে রক্ষা পান। শাস্তি আসার আগে তিনি তাঁদের সতর্ক করেছিলেন এবং আল্লাহর আদেশ মেনে নিরাপদ স্থানে সরে যান।
শিক্ষণীয় বিষয়
১. তাওহীদ: হযরত সালেহ (আঃ) আমাদের শেখান যে, এক আল্লাহর ইবাদত ছাড়া কোনো পথ নেই।
২. আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা: আল্লাহর আদেশ অমান্য করলে কঠিন শাস্তি অবশ্যম্ভাবী।
৩. ধৈর্য ও দাওয়াত: তিনি ধৈর্যের সঙ্গে তাঁর জাতিকে সত্যের পথে ডেকেছেন, যা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
উপসংহার
হযরত সালেহ (আঃ)-এর জীবন এবং সমূদ জাতির ধ্বংসের ঘটনা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এটি প্রমাণ করে যে, যারা আল্লাহর পথে চলে, তারা নিরাপদ, আর যারা তাঁর আদেশ অমান্য করে, তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।