হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর জীবনী
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ছিলেন আল্লাহর একজন প্রিয় নবী এবং ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁকে “খলিলুল্লাহ” বা আল্লাহর বন্ধু বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাঁর জীবন তাওহীদের দাওয়াত, পরীক্ষার ধৈর্য, এবং আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্যের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
জন্ম ও শৈশব
হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর জন্ম ইরাকের বাবেল শহরে, যেখানে তাঁর জাতি মূর্তিপূজা এবং নক্ষত্রপূজায় লিপ্ত ছিল। তাঁর পিতার নাম ছিল আযর (কুরআনে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে), যিনি নিজেই মূর্তি নির্মাতা ছিলেন।
শৈশব থেকেই ইব্রাহীম (আঃ) মূর্তিপূজা এবং পৌত্তলিকতার বিরোধিতা করতেন। তিনি যুক্তি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছিলেন যে, সৃষ্টিজগৎ পরিচালিত হয় একমাত্র আল্লাহর নির্দেশে।
তাওহীদের দাওয়াত
ইব্রাহীম (আঃ) নিজের জাতিকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন:
“আমি আমার মুখটি আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দিলাম, যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আমি মূর্তিপূজকদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (সূরা আল-আন‘আম: ৭৯)
তাঁর এই দাওয়াতকে জাতির মানুষ এবং পিতা আযর প্রত্যাখ্যান করেন।
নমরূদের সঙ্গে যুক্তি
হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সময়কালে শাসক ছিলেন রাজা নমরূদ। তিনি নিজেকে ঈশ্বর দাবি করতেন। ইব্রাহীম (আঃ) নমরূদের সঙ্গে তাওহীদের বিষয়ে যুক্তি করেন। কুরআনে বলা হয়েছে:
“ইব্রাহীম বললেন, ‘আমার রব সূর্য উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে; তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করো।’ তখন ওই অবিশ্বাসী হতবাক হয়ে গেল।” (সূরা আল-বাকারা: ২৫৮)
আগুনে নিক্ষেপ
ইব্রাহীম (আঃ) যখন মূর্তি ভেঙে ফেলেন এবং আল্লাহর পথে দাওয়াত দেন, তখন তাঁর জাতি তাঁকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁকে একটি বিশাল আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। তবে আল্লাহর হুকুমে আগুন তাঁর জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যায়। কুরআনে বলা হয়েছে:
“আমরা বললাম, হে আগুন! তুমি শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও ইব্রাহীমের জন্য।” (সূরা আল-আম্বিয়া: ৬৯)
হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর কুরবানি
ইব্রাহীম (আঃ)-এর জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ছিল তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে আল্লাহর নির্দেশে কুরবানি করা। তিনি আল্লাহর আদেশ পালনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলেন। আল্লাহ তাআলা ইসমাইল (আঃ)-এর পরিবর্তে একটি পশু পাঠান এবং কুরবানির আদেশ রক্ষা করেন। এ ঘটনা ঈদুল আজহার মূল প্রেক্ষাপট।
কাবা নির্মাণ
আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং ইসমাইল (আঃ) পবিত্র কাবা ঘর নির্মাণ করেন। তাঁরা দোয়া করেছিলেন:
“হে আমাদের প্রভু! আমাদের থেকে এটি কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।” (সূরা আল-বাকারা: ১২৭)
শিক্ষণীয় বিষয়
১. তাওহীদে অবিচলতা: ইব্রাহীম (আঃ)-এর জীবন আমাদের শেখায় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখা এবং তাওহীদে অবিচল থাকা।
২. পরীক্ষায় ধৈর্য: তাঁর জীবনের প্রতিটি পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য এবং আল্লাহর আদেশ মেনে চলার গুরুত্ব শেখায়।
৩. ত্যাগের শিক্ষা: ইসমাইল (আঃ)-এর কুরবানির ঘটনা ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অনুপ্রেরণা দেয়।
উপসংহার
হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর জীবনী মানবজাতির জন্য এক অনন্য আদর্শ। তাঁর তাওহীদ, ধৈর্য, এবং আত্মত্যাগের শিক্ষা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পথনির্দেশক। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তৌফিক দিন। আমিন।