পড়ুন নিজের মাতৃভাষায়: হযরত লূত (আঃ) এর জীবনী

হযরত লূত (আঃ) এর জীবনী

হযরত লূত (আঃ) ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত একজন মহান নবী, যিনি পাপাচার ও অনৈতিকতায় নিমজ্জিত সাদুম ও আমুরা অঞ্চলের অধিবাসীদের সৎপথে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর জীবনী পবিত্র কুরআনে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য নৈতিক শিক্ষা ও সতর্কবার্তা।

জন্ম ও পরিচয়

হযরত লূত (আঃ) ছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর ভ্রাতুষ্পুত্র। তিনি হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সঙ্গেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন এবং তাঁর দাওয়াতে সহযোগিতা করেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তাঁকে নবী হিসেবে মনোনীত করেন এবং সাদুম অঞ্চলের অধিবাসীদের দিকে প্রেরণ করেন।

লূত (আঃ)-এর জাতি ও তাদের পাপ

লূত (আঃ)-এর জাতি ছিল নৈতিকভাবে অত্যন্ত অধঃপতিত। তারা সমকামিতার মতো জঘন্য পাপ কাজে লিপ্ত ছিল, যা তৎকালীন সমাজে খুবই নিন্দিত ছিল। এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে:

“তোমরা কি জগতবাসীর মধ্যে পুরুষদের সঙ্গে কুকর্ম করো এবং তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যে স্ত্রীলোক সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে ছেড়ে দাও?” (সূরা আশ-শু‘আরা: ১৬৫-১৬৬)

লূত (আঃ)-এর দাওয়াত

হযরত লূত (আঃ) তাঁর জাতিকে আল্লাহর পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি তাদের সতর্ক করে বলেন যে, পাপাচার ত্যাগ না করলে আল্লাহর কঠোর শাস্তি তাদের উপর নেমে আসবে। তবে জাতি তাঁর কথা গুরুত্ব না দিয়ে তাঁকে উপহাস করে এবং তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে থাকে।

আল্লাহর শাস্তি

হযরত লূত (আঃ)-এর জাতি যখন কোনোভাবেই সৎপথে ফিরে আসতে চায়নি, তখন আল্লাহ তাদের ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। কুরআনে বলা হয়েছে:

“অতঃপর যখন আমাদের নির্দেশ এল, তখন আমি (আল্লাহ) উক্ত জনপদকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর পাথরের মেঘমালা বৃষ্টি বর্ষণ করলাম।” (সূরা হুদ: ৮২)

লূত (আঃ)-এর রক্ষা

শাস্তি নেমে আসার আগে আল্লাহ হযরত লূত (আঃ) এবং তাঁর অনুসারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশ দেন। তিনি এবং তাঁর মুমিন অনুসারীরা রক্ষা পান। তবে তাঁর স্ত্রী পাপীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হন।

শিক্ষণীয় বিষয়

১. পাপ ও শাস্তির সম্পর্ক: হযরত লূত (আঃ)-এর জীবনী আমাদের শেখায় যে, পাপাচার ও অনৈতিকতা মানবসমাজ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
২. ধৈর্য ও দাওয়াত: তাঁর দাওয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সৎপথে অন্যদের আহ্বান জানানো একজন মুমিনের কর্তব্য।
৩. আল্লাহর প্রতি আনুগত্য: যারা আল্লাহর আদেশ মেনে চলে, আল্লাহ তাদের অবশ্যই রক্ষা করেন।

উপসংহার

হযরত লূত (আঃ)-এর জীবনী আমাদের জন্য নৈতিকতা, ধৈর্য, এবং আল্লাহর আদেশ মেনে চলার গুরুত্বের শিক্ষা বহন করে। তাঁর জাতির ধ্বংস মানবজাতির জন্য এক বড় সতর্কবার্তা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পাপাচার থেকে বাঁচিয়ে সৎপথে পরিচালিত করুন। আমিন।