হযরত মূসা (আঃ)-এর জীবনী: এক মহৎ নবীর সংগ্রামী জীবন
পরিচিতি
হযরত মূসা (আঃ) ছিলেন আল্লাহ্র প্রেরিত অন্যতম প্রধান নবী। তিনি ইসলামের পাঁচজন উলুল আজম নবীর একজন এবং বনি ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত নবী। হযরত মূসা (আঃ)-এর জীবন কুরআন ও তাওরাতে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি আল্লাহ্র সাহায্যে ফিরআউনের অত্যাচার থেকে বনি ইসরাইলকে মুক্ত করেন এবং তাঁদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
জন্ম ও শৈশব
হযরত মূসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন এমন সময়ে, যখন মিশরের শাসক ফিরআউন বনি ইসরাইলের পুরুষ সন্তানদের হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন। তাঁর মাতা আল্লাহ্র নির্দেশে তাঁকে একটি বাক্সে রেখে নদীতে ভাসিয়ে দেন। ফিরআউনের স্ত্রী আছিয়া বাক্সটি পান এবং মূসা (আঃ)-কে দত্তক নেন। এভাবে আল্লাহ্র রহমতে হযরত মূসা (আঃ) ফিরআউনের প্রাসাদেই লালিত-পালিত হন।
নবুয়ত প্রাপ্তি
যুবক বয়সে, হযরত মূসা (আঃ) ভুলক্রমে একজন মিশরীয়কে হত্যা করে মদিনায় আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি হযরত শোয়াইব (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর কন্যাকে বিয়ে করেন। একদিন মদিনা থেকে মিশরে ফেরার পথে তূর পর্বতে আল্লাহ্র সাথে তাঁর প্রথম কথা হয়। এখানে তিনি নবুয়তের দায়িত্ব লাভ করেন এবং আল্লাহ্ তাঁকে ফিরআউনের কাছে দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দেন।
ফিরআউনের দরবারে দাওয়াত
আল্লাহ্র নির্দেশে হযরত মূসা (আঃ) তাঁর ভাই হযরত হারুন (আঃ)-কে সাথে নিয়ে ফিরআউনের কাছে যান। তাঁরা তাকে আল্লাহ্র ইবাদতের আহ্বান জানান এবং বনি ইসরাইলকে মুক্তি দেওয়ার দাবি করেন। ফিরআউন এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তবে, আল্লাহ্র কুদরতে হযরত মূসা (আঃ) বিভিন্ন মুজিজা প্রদর্শন করেন, যেমন লাঠি দিয়ে সাপ বানানো এবং হাতকে জ্যোতির্ময় করা।
বনি ইসরাইলের মুক্তি
ফিরআউন যখন বারবার আল্লাহ্র সতর্কবার্তা অমান্য করেন, তখন আল্লাহ্ তাঁর উপর বিভিন্ন শাস্তি প্রেরণ করেন। অবশেষে, হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহ্র নির্দেশে বনি ইসরাইলকে মিশর থেকে বের করে নিয়ে যান। লোহিত সাগর পার হওয়ার সময় আল্লাহ্র মুজিজায় সমুদ্র দ্বিখণ্ডিত হয় এবং মূসা (আঃ)-এর অনুসারীরা নিরাপদে পার হন। অন্যদিকে, ফিরআউন ও তার সৈন্যরা সমুদ্রে ডুবে মারা যায়।
তাওরাতের প্রকাশ
হযরত মূসা (আঃ) বনি ইসরাইলকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য তূর পর্বতে আল্লাহ্র কাছ থেকে তাওরাত লাভ করেন। এটি ছিল বনি ইসরাইলের জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে প্রেরিত বিধান।
মৃত্যু
হযরত মূসা (আঃ) দীর্ঘকাল বনি ইসরাইলের নেতৃত্ব দেন। ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, তিনি প্রায় ১২০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর কবরের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায় না।
শিক্ষা ও উপদেশ
হযরত মূসা (আঃ)-এর জীবনী আমাদের ধৈর্য, দৃঢ়তা এবং আল্লাহ্র উপর নির্ভরশীলতার শিক্ষা দেয়। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় থেকে আমরা আল্লাহ্র পথে সংগ্রাম এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা পাই।
উপসংহার
হযরত মূসা (আঃ)-এর জীবন এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। তাঁর নেতৃত্ব, সংগ্রাম এবং আল্লাহ্র প্রতি গভীর আনুগত্য আমাদের সকলের জন্য শিক্ষণীয়। তাঁর জীবনের ঘটনাবলি কুরআনে যে গুরুত্ব দিয়ে বর্ণিত হয়েছে, তা থেকে আমরা তাঁর নবুয়ত ও মহানত্বের প্রমাণ পাই।