স্যাটেলাইট কী, এটি কীভাবে কাজ করে, এবং প্রথম স্যাটেলাইটের গল্প
স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ হলো এমন একটি প্রযুক্তিগত ডিভাইস যা মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং এটি পৃথিবী বা অন্য কোনো গ্রহের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। আজকের আধুনিক বিশ্বে স্যাটেলাইট যোগাযোগ, আবহাওয়া পূর্বাভাস, জিপিএস, এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রবন্ধে আমরা স্যাটেলাইট কী, এটি কীভাবে কাজ করে, এবং প্রথম স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
স্যাটেলাইট কী?
স্যাটেলাইট হলো একটি কৃত্রিম ডিভাইস যা মহাকাশে স্থাপন করা হয়। এটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে কক্ষপথে ঘোরে। স্যাটেলাইটের মূল কাজ হলো তথ্য সংগ্রহ করা এবং পৃথিবীতে তা পাঠানো।
স্যাটেলাইটের প্রধান উপাদানগুলো হলো:
পাওয়ার সিস্টেম: এটি সোলার প্যানেল বা ব্যাটারি দ্বারা পরিচালিত হয়।
কমিউনিকেশন সিস্টেম: রেডিও সংকেত ব্যবহার করে পৃথিবীর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে।
কন্ট্রোল সিস্টেম: স্যাটেলাইটের অবস্থান ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে।
স্যাটেলাইট কীভাবে কাজ করে?
স্যাটেলাইটের কাজ মূলত এর ধরণের ওপর নির্ভর করে। যেমন:
যোগাযোগ স্যাটেলাইট: রেডিও, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট সংকেত প্রেরণ ও গ্রহণ করে।
আবহাওয়া স্যাটেলাইট: পৃথিবীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে এবং পূর্বাভাস প্রদান করে।
জিপিএস স্যাটেলাইট: নির্দিষ্ট স্থান বা অবস্থান সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।
গবেষণা স্যাটেলাইট: মহাকাশের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করে।
স্যাটেলাইটে ইনস্টল থাকা সেন্সর এবং ক্যামেরাগুলো পৃথিবী বা মহাকাশের ছবি তুলে এবং রেডিও সংকেতের মাধ্যমে সেগুলো পৃথিবীতে পাঠায়। এই প্রক্রিয়ায় মাটির নিচের কমান্ড সেন্টার থেকে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রথম স্যাটেলাইট: স্পুটনিক ১
বিশ্বের প্রথম স্যাটেলাইট ছিল স্পুটনিক ১। এটি ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়ন উৎক্ষেপণ করে। স্পুটনিক ১ ছিল একটি ছোট, গোলাকার স্যাটেলাইট যার ওজন ছিল মাত্র ৮৩.৬ কিলোগ্রাম। এটি পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপন করা হয় এবং প্রতি ৯৬ মিনিটে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করত।
স্পুটনিক ১-এর সাফল্য বিশ্বের মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে মহাকাশ প্রতিযোগিতার সূচনা করে।
স্যাটেলাইটের ব্যবহার
স্যাটেলাইটের ব্যবহার আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রধান কিছু ব্যবহার হলো:
টেলিযোগাযোগ: মোবাইল ফোন, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট।
আবহাওয়া পূর্বাভাস: প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কতা।
নিরাপত্তা ও নজরদারি: সামরিক ও বেসামরিক কাজে নজরদারি।
গবেষণা ও শিক্ষা: মহাকাশ ও পৃথিবীর পরিবেশ নিয়ে গবেষণা।
জিপিএস এবং নেভিগেশন: যানবাহন এবং ব্যক্তিগত ডিভাইসের জন্য অবস্থান নির্ধারণ।
উপসংহার
স্যাটেলাইট আধুনিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি তথ্যপ্রযুক্তি, নিরাপত্তা, এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। স্পুটনিক ১-এর মাধ্যমে শুরু হওয়া এই যাত্রা আজকের দিনে এসে মানবজাতির উন্নয়নে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করছে। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।